জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি সেই অবরোধ এখনো প্রত্যাহার করেনি

প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন -পিবিএ
সব বাধাবিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক রকম চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থাকবে। যতই সমালোচনা হোক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। শুধু সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এই অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। এটি বাঙালি জাতির বিরল সম্মান ও অনন্য অর্জন। বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী করার কারণে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। কিন্তু এই কাজ আমরা সহজভাবে করতে পেরেছি তা নয়। এই যাত্রাপথ কখনো সুগম ছিল না। আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, গাড়িতে আগুন, অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ- সেই অবরোধ বিএনপি এখনো প্রত্যাহার করেনি। সংসদ নেতা বলেন, 'উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপরে কোভিড-১৯-ও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির চাকা যখন স্থবির তখন আমরা চাকা সচল রেখেছি। এর ফলাফল দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া। এজন্য আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো। জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়ার কথা বলেন, তারা তো কেউ দেশকে উন্নত করতে চাননি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু ও বিলাসবহুল জীবন। আর তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে টেনে একটি শ্রেণি তৈরি করলেন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে আমরা সুবিধা যেমন পাব আবার স্বল্পোন্নত দেশের সুযোগগুলো পাব না। অবশ্য আমরা ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছি করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য। এতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।' বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার প্রসঙ্গ ধরে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তার কন্যা শেখ হাসিনা। আবেগাপস্নুত কণ্ঠে তিনি বলেন, যাদের জন্য জাতির পিতা সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেন সেই বাঙালি জাতির হাতে তাঁকে জীবন দিতে হলো। তারপর সবকিছু জেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিতার স্বপ্নপূরণের জন্য আমি দেশে ফিরে আসি। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু কেন জানি না আলস্নাহ রাব্বুল আলআমিন বারবার বাঁচিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলেই একটা মর্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এদিকে, একইদিন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের নীতিগত সহায়তা দিতে তার সরকার 'অঙ্গীকারবদ্ধ'। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৮টি দেশে পণ্য রপ্তানিতে এক তরফা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ৩৬টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত-করারোপন পরিহার চুক্তি রয়েছে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ বিভিন্ন জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইন্যানশিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র এবং বস্নু-ইকোনমি- সম্ভাবনাময় এই ১১টি খাতকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।' শেখ হাসিনা বলেন, যে ২১ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার সরকার গঠন করেছিলাম, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে দ্রম্নত প্রবৃদ্ধি অর্জন ছিল তার অন্যতম। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে বিএনপির সময় বাংলাদেশ যেখানে ২৮৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছিল, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে আওয়ামী লীগের সময়ে তা বেড়ে ৮১৬ মিলিয়ন ডলার হয় বলে অনুষ্ঠানে তথ্য দেন শেখ হাসিনা। 'আমরা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বিদু্যৎ উৎপাদন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি, যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে মাত্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হতো।' আওয়ামী লীগই সরকারে এসে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। তাছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও রপ্তানি উন্নয়নের লক্ষ্যে আইটি-ভিলেজ, হাই টেক-পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিই। অথচ আমাদের বাংলাদেশে এক সময় আমরা বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত করার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা সেই সুযোগটা নেয়নি এবং প্রত্যাখ্যান করেছিল।' আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের ২ হাজার ৩৩২ জন অংশগ্রহণকারী নিবন্ধন করেছেন বলে ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী। ঢাকারর্ যাডিসন বস্নু ওয়াটার গার্ডেনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।