বিবি ব্যাংকের গবেষণা

আথির্ক অন্তভুির্ক্ত কাযর্ক্রমে বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন

গত ১০ বছরে ক্ষুদ্র আমানত অ্যাকাউন্টের পরিমাণ বেড়েছে ২৩৭ শতাংশ, একই সময়ে বৃহৎ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৩০৪ শতাংশ

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮ কোটি ১৩ লাখ। চলতি বছরের জুন পযর্ন্ত ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৯ কোটি ২ লাখ। অথার্ৎ অ্যাকাউন্টের ৯০ দশমিক ১২ শতাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মানুষের। ক্ষুদ্র অ্যাকাউন্টে জমা আছে আমানতের মাত্র ৬ শতাংশ এবং বৃহৎ অ্যাকাউন্টে জমা আছে আমানতের ৯৪ শতাংশ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের আথির্ক অন্তভুির্ক্তমূলক নানাবিধ কাযর্ক্রমের ফলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যার সঙ্গে বেড়েছে গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র সঞ্চয়। ক্ষুদ্র সঞ্চয় বৃদ্ধির প্রভাবে নিশ্চিত হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন ও দেশের আথির্ক খাতের স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপাটের্মন্টের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে উপ-পরিচালক বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস ও বিধান চন্দ্র সাহা গবেষণা কাযর্ক্রমটি পরিচালনা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পযর্ন্ত কৃষকসহ সুবিধা বঞ্চিত ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। একই সময় পযর্ন্ত ব্যাংক খাতে মোট ৯ কোটি ২ লাখ অ্যাকাউন্টের মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮ কোটি ১৩ লাখ। যা মোট হিসাবধারীর মধ্যে ৯০ দশমিক ১২ শতাংশ। গত ১০ বছরে ক্ষুদ্র আমানত অ্যাকাউন্টের পরিমাণ বেড়েছে ২৩৭ শতাংশ, একই সময়ে বৃহৎ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৩০৪ শতাংশ। ক্ষুদ্র আমানত অ্যাকাউন্টে জমা আছে মোট আমানতের মাত্র ৬ শতাংশ টাকা। কিন্তু বৃহৎ আমানত অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে ৯৪ শতাংশ। টাকা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে ক্ষুদ্র আমানতি হিসেবে জমা ছিল মোট আমানতের ১৫ শতাংশ টাকা। অথার্ৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদ্র আমানত অ্যাকাউন্ট এবং স্থিতি বাড়লেও বৃহৎ আমানতের স্থিতির প্রবৃদ্ধি ছিল অনেক বেশি। এটি ধনী-গরীবের বৈষম্য বৃদ্ধির একটি ইঙ্গিত বহন করে। আমানত হিসাব বৃদ্ধি এবং বৃহৎ আমানত বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের আথির্ক অন্তভুির্ক্তমূলক উদ্যোগের সুফল এবং তা অথৈর্নতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূণর্। অপরদিকে, ক্ষুদ্র আমানত হিসাব বৃদ্ধির ধারাকে আথির্ক অন্তভুির্ক্তর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় একে অপরের সঙ্গে সরাসরি সম্পকর্যুক্ত। অথার্ৎ ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পযর্ন্ত দেখা যায় ক্ষুদ্র আমানত হিসাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আথির্ক অন্তভুির্ক্তর মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পযর্ন্ত সময়ে বৃহৎ আমানত হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও ক্ষুদ্র আমানত হিসাবসমূহের সংখ্যার তেমন কোনো পরিবতর্ন হয়নি। ফলে এর ক্ষুদ্র আমানতে কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। অথার্ৎ বৃহৎ আমানতের তুলনায় ক্ষুদ্র আমানত অধিক স্থিতিশীল এবং আথির্ক অন্তভুির্ক্তর প্রধান হাতিয়ার। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আথির্ক খাতে নারীর অংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে আথির্ক সেবায় নারীর প্রবেশাধিকার বাড়ছে এবং একইসঙ্গে বাড়ছে অথৈর্নতিক সম্পদে নারীর অংশীদারিত্ব এবং ঘটছে নারীর ক্ষমতায়ন। আথির্ক সেবায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবতের্নর ফলে বিশেষত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এ নারীরা অধিক হারে প্রাতিষ্ঠানিক আথির্ক সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ অথর্নীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটছে লক্ষণীয়ভাবে। অপরদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিদের্শনা পরামশর্ দেয়া ছাড়াও কতিপয় প্রণোদনা প্যাকেজ এবং পুনঃঅথার্য়ন স্কিম চালু করেছে। এর ফলে অথর্নীতি এবং সমাজের মূলধারায় নারীর অন্তভুির্ক্ত, সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পযর্ন্ত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্রমবধর্মান অথার্য়নের ধারা এ কাযর্ক্রমকে আরও বেগবান করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আথির্ক অন্তভুির্ক্ততে বতর্মান সরকারের সবগুলো উদ্যোগই সফল হয়েছে। ব্যাংক সেবার আওতায় আনতে জনগণকে ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণে ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে।