প্রত্যাবাসনে ‘আতঙ্কিত’ রোহিঙ্গারা

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কক্সবাজার টেকনাফের শরণাথীর্ ক্যাম্পে মায়ের কোলে রোহিঙ্গা এক শিশু Ñসংগৃহীত
বাংলাদেশ ছেড়ে মিয়ানমারে যেতে রোহিঙ্গা শরণাথীর্রা আতঙ্ক বোধ করছে বলে জানিয়েছে সহায়তা সংগঠনগুলো। দুই দেশে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করা সহায়তা সংগঠনগুলো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনাটি একটু আগেভাগে হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে তারা। শুক্রবার বাতার্ সংস্থা এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়। গত আগস্টে মিয়ানমারের উত্তরে রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের শিকার হয়ে ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ আন্তজাির্তক সংস্থাগুলোর তদন্তে রোহিঙ্গা দমনে রাখাইনে ভয়াবহ নিপীড়ন, নিবির্চারে হত্যা ও ধষের্ণর অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কমর্কতার্রা রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শীষর্ সামরিক কমর্কতাের্দর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার আহŸান জানিয়েছেন। এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিরা পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানোর কারণে আত্মরক্ষার জন্য এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তবে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব, চলাফেলার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পযর্ন্ত মিয়ানমারে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। রাখাইন এখনো রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযুক্ত নয় বলে দাতা সংগঠনগুলো জোর গলায় বললেও দুই দেশের সরকার জানিয়েছে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বড় আকারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। ৩০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় জয়েন্ট ওয়াকির্ং গ্রæপের (জেডবিøউজি) বৈঠকে দুই দেশের কমর্কতার্রা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমর্কতাের্দর ভাষ্য, গত ফেব্রæয়ারিতে মিয়ানমারকে ৮ হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হয়। এ পযর্ন্ত ১৯ দফায় ৪ হাজার ৬০০ জনকে ফেরানোর বিষয়ে মিয়ানমার সম্মতি জানিয়েছে। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করতেও আট মাস সময় নিয়েছে মিয়ানমার। নানা অজুহাতে মিয়ানমার অন্তত দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি নয়। এদের মধ্যে অন্তত ৫২ জনকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছে মিয়ানমার। এএফপির খবরে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা ৪২টি সহায়তা সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নিরাপত্তার জন্য তারা (রোহিঙ্গারা) পালিয়ে বাংলাদেশে গেছে। নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তাদের দেশে ফেরত পাঠানোকে ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারে এখন ফিরে গেলে কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা এবং এ ব্যাপারে তথ্য না পেয়ে তারা বিপযর্স্ত। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে অক্সফাম, ওয়াল্ডর্ ভিশন এবং সেভ দ্য চিলড্রেন রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শরণাথীর্রা ভয় পাচ্ছে যে, মধ্য রাখাইন রাজ্যে যেভাবে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে এক জায়গায় আটক রাখা হয়েছে, এই প্রত্যাবাসনের আওতায় সেভাবেই হয়তো রাখা হবে। রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জের ধরে মধ্য রাখাইন অঞ্চলে ২০১২ সাল থেকে ছয় বছর ধরে তাদের ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযানের পর পুরো এলাকা সিলগালা করে ফেলা হয়েছে। সরকারের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেখানে শুধু গণমাধ্যম ও জ্যেষ্ঠ ক‚টনীতিকরা যেতে পারেন। সেখানকার পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য জাতিসংঘকে সীমিত এলাকায় প্রবেশাধিকারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এই অনুমোদনের প্রক্রিয়াও চলেছে বেশ ধীরগতিতে। বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা আবারও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করবে। ওই রুটটি রোহিঙ্গাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অথৈর্নতিক সুযোগ খুঁজে পেতে এর আগেও শরণাথীর্ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গাদের সেই সব দেশে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই সপ্তাহে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বঙ্গোপসাগর দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের কোস্টগাডর্ ৩৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় মানব পাচারের অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।