অস্ত্রের ব্যবসা বেড়েছে বিশ্বে

সিপরির তথ্য করোনাকালে খাবার, ওষুধসহ একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি-রপ্তানি করতে অসুবিধা হলেও অস্ত্রে সমস্যা হয়নি

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
করোনা মহামারির কারণে পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিই এখন সংকটে। কিন্তু তার জন্য বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ব্যবসা। বরং ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে অস্ত্র কেনাবেচা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বক্তব্য, ২০২০ সালে বিশ্বের অর্থনীতি প্রায় তিন শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ অস্ত্রের ব্যবসা বেড়েছে এক দশমিক তিন শতাংশ। সংবাদসূত্র :ডিডবিস্নউ নিউজ স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সিপরির তথ্য বলছে, অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রায় প্রতিটি দেশই করোনাকালে অস্ত্রের ব্যবসায় চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, খাবার, ওষুধসহ একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এ সময়ে আমদানি-রপ্তানি করতে অসুবিধা হলেও অস্ত্রের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি। বিশ্বের প্রথম ১০০টি অস্ত্র তৈরির সংস্থা একসঙ্গে ২০২০ সালে অস্ত্র বেচে লাভ করেছে ৫৩১ বিলিয়ন (৫৩ হাজার ১০০ কোটি) ডলার, যা বেলজিয়ামের মতো একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর চেয়েও বেশি। সিপরির গবেষকদের বক্তব্য, করোনায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি মার খেলেও অস্ত্র ব্যবসায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি। দেশটির ৪১টি সংস্থা গোটা বিশ্বের মোট অস্ত্রের ৫৪ শতাংশ তৈরি করেছে। এর মধ্যে শুধু লকহেড মার্টিন ৫৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্কুস বায়ারের বক্তব্য, অস্ত্র নির্মাণ সংস্থাগুলো তাদের ব্যবসা ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। তার বক্তব্য, 'জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক বছরে বিশ্বের বড় অস্ত্র তৈরির সংস্থাগুলো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রচারে ব্যয় করেছে ৮৫ মিলিয়ন (আট কোটি ৫০ লাখ) ডলার। আর লবিংয়ের জন্য খরচ করেছে দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি।' অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে এশিয়ায় এই সময়ে এশিয়ায় অস্ত্র বিক্রি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। গবেষকদের বক্তব্য, অস্ত্র বিক্রিতে প্রথম সারিতে উঠে আসছে ভারতের নাম। ভারতের চারটি সংস্থা প্রথম ১০০টি অস্ত্র তৈরির কোম্পানির মধ্যে উঠে এসেছে। এক বছরে তারা মোট এক দশমিক দুই শতাংশ অস্ত্র তৈরি করেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার সমান। উলেস্নখ্য, দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই অস্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তবে এশিয়ায় অস্ত্রের বাজার সবচেয়ে বেশি চীনের। চীনের পাঁচটি সংস্থা সব মিলিয়ে ১৩ শতাংশ অস্ত্র তৈরি করেছে। সিপরির বক্তব্য, চীনের অস্ত্র তৈরির সংস্থাগুলো নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। চীন সব তথ্য দেয় না। ফলে চীনের যে তথ্য মিলেছে, বাস্তবে চীনের উৎপাদন তার চেয়েও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপরি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে ঘোর করোনাকালে যুক্তরাজ্যের অস্ত্রের বাজার সবচেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে; ছয় দশমিক দুই শতাংশ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র; এক দশমিক ৯ শতাংশ। চীনে বেড়েছে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ। জার্মানির এক দশমিক তিন শতাংশ। রাশিয়া এবং ফ্রান্সের অবশ্য কমেছে। রাশিয়ার কমেছে ছয় দশমিক পাঁচ এবং ফ্রান্সের সাত দশমিক সাত শতাংশ। রাশিয়ার ক্ষতি অস্ত্র ব্যবসায় একসময় বড় খেলোয়াড় ছিল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমানে টক্কর দিতো। রাশিয়ার অস্ত্রের বাজার ছিল এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাংশ। সিপরির রিপোর্টের ব্যাখ্যা, চীন এবং ভারতে অস্ত্রের উৎপাদন বাড়ায় তার প্রভাব পড়ছে রাশিয়ায়। ব্যবসা চোখে পড়ার মতো মার খেয়েছে। ফ্রান্সের অস্ত্র ব্যবসাও এক বছরে খানিকটা মার খেয়েছে। ইউরোপ সার্বিকভাবে লাভ করেছে ইউরোপের ২৬টি কোম্পানি একত্রে অস্ত্র তৈরি করেছে মোট উৎপাদনের ২১ শতাংশ। যৌথভাবে লাভ করেছে ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি সবচেয়ে বেশি অস্ত্র তৈরি করেছে। অস্ত্র ও সিলিকন ভ্যালি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সিপরির রিপোর্টে। এখন আর কেবল অস্ত্র তৈরির পুরনো সংস্থাগুলোর দিকে তাকিয়ে নেই বিশ্বের প্রতিরক্ষা। সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলো, অর্থাৎ গুগল, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিও তাদের ব্যাপক সাহায্য করছে। কারণ 'ইনফরমেশন টেকনোলজি' (আইটি) এখন সাইবার যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার। সম্প্রতি মার্কিন সামরিক বাহিনী মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কিছু চশমা কিনেছে। যে চশমা পরলে সেনারা ওই জায়গার বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবে। ফলে অস্ত্র ব্যবসার হিসাব করতে হলে এখন সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলোকেও ধরতে হবে।