শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
এফবিসিসিআই-নোয়াব মতবিনিময় সভা

করভার ও কাগজের উচ্চমূল্যে সংবাদপত্র শিল্প সংকটে পড়ছে

সংবাদপত্রের আয় বাড়েনি বিজ্ঞাপন কমে গেছে হ করোনায় বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিলেও সংবাদপত্র শিল্পে দেওয়া হয়নি হ সার্বিকভাবে ৩৭ শতাংশ কর দিতে হয়
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

সার্বিকভাবে ৩৭ শতাংশ কর ও কাগজের উচ্চমূল্যে সংবাদপত্র শিল্প সংকটে পড়েছে। এছাড়া বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র শিল্পে সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের আয় বাড়েনি, বিজ্ঞাপন কমে গেছে। এখন বিজ্ঞাপনে ডিসকাউন্ট অনেক দিতে হচ্ছে। পত্রিকা বিক্রি ও বিজ্ঞাপন বাবদ অনেক টাকা অনাদায়ী থাকছে।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যমের ভূমিকা, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে নোয়াবের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদসহ এফবিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা।

নোয়াব সভাপতি বলেন, করোনার সময় সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিলেও সংবাদপত্র শিল্পে দেওয়া হয়নি। প্রণোদনা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নোয়াবের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সংবাদপত্র হকারদের জন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের কাছে জায়গা চেয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ফলাফল আসেনি।

এ. কে. আজাদ বলেন, সংবাদপত্রে সার্বিকভাবে ৩৭ শতাংশ কর দিতে হয়। যদিও অন্যান্য শিল্পে ভ্যাটছাড় আছে। বিভিন্ন খাতে ভ্যাটছাড় থাকলেও সংবাদপত্রকে তা দিতে হচ্ছে।

নোয়াব সভাপতি বলেন, 'একটি সংবাদপত্র বের করতে খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। মানুষ কিনেন ১০ টাকায়। আমরা পাই সাড়ে ৬ টাকা। বাকি টাকা হকারকে দিয়ে দিতে হয়। এই যে সাড়ে ৬ টাকা, তা দীর্ঘদিন কিন্তু অনাদায়ি থাকে। তাহলে প্রশ্ন আসবে বাকি টাকা আমরা কীভাবে যোগাড় করি? এটি করি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে।' তিনি বলেন- করোনার কারণে দুই-আড়াই বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুব খারাপ গেছে।

হকার সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন এবং এফবিসিসিআইকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে নোয়াব সভাপতি বলেন, 'হকাররা সবার কাছে সংবাদপত্র পৌঁছে দেন। তাদের বসার কোনো জায়গা নেই। এজন্য সিটি করপোরেশন ও এফবিসিসিআইয়ের সহায়তা দরকার।'

রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সব শিল্পে করহার ঠিক করা আছে। যেমন- তৈরি পোশাক খাতের জন্য নির্দিষ্ট করহার রয়েছে। একইভাবে সবগুলো খাতের জন্য একটি কর কাঠামো দেওয়া আছে। কিন্তু আমাদের এই রুগ্‌ণ শিল্পের জন্য কোনো কর কাঠামো নেই। এই সমস্যাগুলো নিয়ে যদি এফবিসিসিআই সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে, তাহলে আমরা উপকৃত হব। ভ্যাটের ক্ষেত্রেও অনেক শিল্প মুক্ত রয়েছে। আবার অনেকের নির্ধারিত হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে।'

দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, 'বর্তমানে সংবাদপত্র শিল্প অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এটি সেবা শিল্প হওয়া সত্ত্বেও এর করপোরেট ট্যাক্স ৩৭ শতাংশ, যা এই শিল্পের অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাধা। এ অবস্থায় টিকে থাকতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এই শিল্পকে।' অধিকাংশ সংবাদপত্রকেই ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, নতুন ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কারণে সংবাদপত্র শিল্প চাপের মধ্যে পড়েছে। এই শিল্পের আয় বাড়ানো, করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে ১০ শতাংশ করাসহ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের সঙ্গে নোয়াবের যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের সব শিল্প সমস্যা সমাধানে এফবিসিসিআই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ ব্যবসা দেশের বেসরকারি খাত প্রতিনিধিত্ব করে। এফবিসিসিআই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেয়। তবে, আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ আমাদের ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন করতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের ৫০-৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাড়াতে হবে।

জসিম বলেন, সরকারের উচিত কোনো নীতিমালা তৈরির আগে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকার ড্যাপ নীতিমালা তৈরি করছে কিন্তু ব্যবসায়ী সম্প্রদায় তা জানে না।

তবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে এফবিসিসিআই গবেষণা উন্নয়নের জন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের একটি উদ্ভাবন কেন্দ্র দরকার। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে