জাহাঙ্গীরনগরে জেনে বুঝেই ভতির্ বৈষম্য

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাবি প্রতিনিধি
সারাদেশে যখন শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবতর্ন আনা হচ্ছে তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে ভতির্ বৈষম্যে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। গত কয়েক বছরের মতো এবারও বিশ^বিদ্যালয়টিতে বৈষম্যের শিক্ষার হচ্ছে মাদ্রাসা ও কারিগরি বোডের্র শিক্ষাথীর্রা। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিশ^বিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদে (সি-ইউনিট) আলাদা ফল প্রকাশ করে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্তুক্তভোগীদের। এ ক্ষেত্রে অনুষদের ডিনসহ কয়েকজন শিক্ষক জেনে বুঝেই সংকট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের সবকয়টি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষাথীের্দর ইউনিটভিত্তিক ফল প্রকাশ ভতির্ করা হয়। এ ক্ষেত্রে একটি মাত্র মেধাক্রম প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্¦বিদ্যালয়ে কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি বোডর্ এবং বিজ্ঞান-মানবিক-ব্যবসায় শাখা বিবেচনা করে আলাদা মেধাক্রম প্রকাশ করা হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে আবার ছেলে-মেয়ে বিবেচনায়ও থাকে পৃথক মেধাক্রম। বৈষম্যের এই অভিনব পদ্ধতিতে একটিমাত্র অনুষদে ১২টি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রত্যেক মেধাতালিকা থেকে ভতির্ করা হয় ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক শিক্ষাথীর্। বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাদেশ, একাডেমিক পলিসি, ভতির্ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি এমনকি অন্য কোনো বিশ^বিদ্যালয়ে এমনটি না থাকলেও এ পদ্ধতিতে বঞ্চিত করা হচ্ছে মাদ্রাসা ও কারিগরি বোডের্র শিক্ষাথীের্দর। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবষের্ সি-ইউনিটে মোট ৩৬৩ জন শিক্ষাথীর্ ভতির্ করা হবে। এদিকে ভতির্ পরীক্ষার প্রকাশিত মেধাক্রম অনুসারে অনুষদে মাদ্রাসা ও কারিগরি বোডের্র শিক্ষাথীের্দর জন্য নিধাির্রত আসন সংখ্যা মাত্র ১৩টি। এর মধ্যে ১১ জন ছাত্র ও মাত্র ২ জন ছাত্রীকে ভতির্ করা হবে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ৭৯, ছাত্রী ৭৯; মানবিক বিভাগের ছাত্র ৭৭, ছাত্রী ৭৭; ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ২১, ছাত্রী ১৭ জন ভতির্ করা হবে বলে আসন নিধার্রণ করা হয়েছে। এতে নিয়ম ও মেধার অবমূল্যায়ন করে অন্যায়ভাবে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ^বিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষাথীর্রা। ইতোমধ্যে ভতিের্ত বৈষম্য নিরসন ও মেধাবীদের সুযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৯ অক্টোবর হাইকোটের্ রিট করেছে ভতির্চ্ছু তিন শিক্ষাথীর্। ওই রিটের প্রেক্ষিতে ৪ নভেম্বর ‘মাদ্রাসা শিক্ষাথীের্দর জন্য আলাদা মেধাতালিকা প্রকাশ কেন অবৈধ হবে না’ জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোটর্। রিটকারী এক শিক্ষাথীর্ জানান, সরকার যেখানে দেশের সবর্ত্র কলেজ-মাদ্রাসার ভেদাভেদ দূর করে সহশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে সেখানে একটি মাত্র বিশ^বিদ্যালয়ে বৈষম্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কলেজের চেয়ে ৩০০ নম্বরের বেশি সিলেবাস এবং ভতির্ পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলেও মাদ্রাসা শিক্ষাথীর্রা মেধার মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এদিকে বিশ^বিদ্যালয়ে ভতির্র ক্ষেত্রে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক পদ্ধতি অবলম্বনের বিষয়ে দায় নিতে নারাজ বিভাগ, ডিনসহ সংশ্লিষ্টরা। ভতিের্ত এমন অনৈতিক পদ্ধতির জন্য ডিন-বিভাগকে, বিভাগ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিকে দায় চাপানোর চেষ্টা করলেও বৈষম্য নিরসনে কাজ করছেন না কেউই। অনুষদের ডিন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবষের্র ভতির্ পরীক্ষার আগে এমন বৈষম্য রাখা হবে না বলে আশ^াস দিলেও তা কাযর্কর হয়নি। এদিকে অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, ইতিহাস বিভাগের সভাপতি এটিএম আতিকুর রহমান, জানাির্লজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি উজ্জ্বল কুমার মÐলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে এমনটি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভাগে শিক্ষাথীর্ ভতির্র ক্ষেত্রে সব বিভাগের শিক্ষাথীের্দর সমান সুযোগের কথা থাকলেও তাদের অনিচ্ছাবশত মাদ্রাসা শিক্ষাথীের্দর আসন সংখ্যা সীমিত করে দেয়া হচ্ছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে সৃষ্ট বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, ‘কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের সভাপতির দেয়া চাহিদা অনুসারে অনুষদে শিক্ষাথীর্ ভতির্ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিভাগ থেকে মাদ্রাসা ও কারিগরি বোডের্র শিক্ষাথীের্দর চাহিদা কম আসায় তাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য হয়ে গেছে।’ বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা হাইকোটের্র নিদের্শ পেলে পুনরায় মেধাতালিকা প্রকাশ করে বৈষম্য নিরসন সম্ভব। এ ছাড়া বৈষম্য নিরসনে এ বছর মাদ্রাসা ও কারিগরি বোডের্র ৯ জন ছাত্র ও ৯ জন ছাত্রী ভতির্র বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে রিটের জবাব দেয়া প্রসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের আইন কমর্কতার্ মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ জানান, ‘রিটের প্রেক্ষিতে বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নাহিদ মাহতাব নামে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বর রিটের জবাব দেয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, স্কুল-কলেজের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে মাদ্রাসা শিক্ষাবোডর্ ২০১৩-১৪ শিক্ষাবষর্ দাখিল এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবষের্র আলিমে দু’শ নম্বরের বাংলা ও দু’শ নম্বরের ইংরেজি পাঠ বজায় রেখে সিলেবাস প্রণয়ন করে। অন্যান্য মৌলিক বিষযগুলোও কলেজ-মাদ্রাসার একই সিলেবাসের অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। এর পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাথীের্দরকে কলেজের সঙ্গে একই মেধাক্রমে বিবেচনা করা হচ্ছে।