বিমান বাংলাদেশ

একই পদে এত বৈষম্য

গত ২ অক্টোবর সুপ্রিম কোটর্ মামলার রায়ে অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের এক মাসের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের নিদের্শ দিলেও তা মানা হয়নি

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
আকাশের সঙ্গে পাতালের যেমন পাথর্ক্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু পদেও ঠিক একই পাথর্ক্য। ২০১৪ সালের অক্টোবরে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কেবিন ক্রু হিসেবে বিমানে চাকরি পেয়েছিলেন দুই শতাধিক তরুণ। মূল বেতন ছিল ১৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে পেতেন ২১ হাজার টাকা। চাকরির বয়স চার বছর পেরিয়ে পঁাচ বছর হতে চলেছে। কেবিন ক্রুর সংখ্যা কমে ১৪৫-এ নেমে এসেছে। তবু এসব কেবিন ক্রুর চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেবিন ক্রু জানান, ২০১৩ সালে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিয়োগ দেয় বিমান কতৃর্পক্ষ। ৮৫ জন তরুণীসহ মোট ২০৪ জনকে ৮৯ দিনের ভিত্তিতে অস্থায়ী কেবিন ক্রু নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের পর এসব তরুণ-তরুণীকে বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর থেকে নিয়মিত অভ্যন্তরীণ ও আন্তজাির্তক আকাশপথে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। নিয়মানুবতির্তা, কমর্দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে ভিভিআইপি ফ্লাইটগুলোতেও রাখা হচ্ছে অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের। গুরুদায়িত্ব দেয়া হলেও সুবিধা ক্ষেত্রে ‘লঘুনীতি’ অনুসরণ করছে বিমান কতৃর্পক্ষÑ একথা জানিয়ে আরেকজন অস্থায়ী কেবিন ক্রু বলেন, কেবিন ক্রু হিসেবে যারা স্থায়ীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে অস্থায়ী কমীের্দর বেতন বৈষম্য চলছে। স্থায়ী কেবিন ক্রুদের সবির্নম্ন বেতন ৪৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি বছর তাদের বেতনের সঙ্গে ইনক্রিমেন্ট যোগ হচ্ছে। স্থায়ী কমীর্রা ৬৫ ঘণ্টা টানা ফ্লাইটে থাকলেই খাবারের বিল পান ১ হাজার ২০০ মাকির্ন ডলার। অতিরিক্ত সময় হলে প্রতি ঘণ্টার জন্য আরও ১৮ ডলার সম্মানী তারা পান। সপরিবারে ফ্রি বিমান টিকিট, সাপ্তাহিক ছুটি, বাষির্ক ছুটি, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতাসহ সব সুবিধাই পাচ্ছেন স্থায়ী কেবিন ক্রুরা। স্থায়ী কমীের্দর (পুরুষ) পোশাক ভাতা হিসেবে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ও নারীদের ছয়টি শাড়ির মূল্য হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। অস্থায়ী কমীের্দর বছরে মাত্র ৫ হাজার টাকা এবং নারীদের দুটি শাড়ির মূল্য হিসেবে ১৫ হাজার টাকা দিচ্ছে বিমান কতৃর্পক্ষ। ডিউটি রোস্টারে অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন লেখা থাকলেও তাদের স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়। প্রয়োজনে তাদের ফ্লাইটে হাজির থাকতে হয়। এর জন্য ভাতা দেয়া হয় না। শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না অস্থায়ী কেবিন ক্রুরা। তাদের ক্ষেত্রে নৈমিত্তিক, বাষির্ক, অসুস্থতাজনিত ও মাতৃত্বকালীন ছুটিও নেই। অসুস্থতাসহ কোনো কারণে দায়িত্ব পালন না করলে অনুপস্থিত দেখিয়ে দৈনিক ৭০০ টাকা বেতন কাটা হয়। অতিরিক্ত সময় (ওভার টাইম) কাজ করলেও পারিশ্রমিক দেয়া হয় না অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের। হজ মৌসুমে সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হলেও তারা কোনো সম্মানী ভাতা পান না। অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের ৮৯ দিন পরপর তাদের চাকরি নবায়ন করা হয়। কিন্তু পরিচয়পত্রে কাডের্র মেয়াদ তিন বছর উল্লেখ করে থাকে বিমান। জানা গেছে, স্থায়ী না করায় ৫৯ জন কেবিন ক্রু চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ১৪৫ জন অস্থায়ী কেবিন ক্রু বিভিন্ন সময় বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহমেদসহ ঊধ্বর্তন কমর্কতাের্দর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের আশ্বাস পেলেও চাকরি স্থায়ী করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এক কেবিন ক্রু বলেন, ‘আমাদের কোনো ঝুঁকি ভাতা নেই। স্থায়ীকরণের দাবি জানালেই চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। চাকরি চলে গেলে শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বয়স চলে যাওয়ায় এখন অন্য চাকরির সুযোগও নেই।’ অস্থায়ী হিসেবে থাকা বিমানের একাধিক কেবিন ক্রু বলেন, মাসে কমপক্ষে দুবার লন্ডন ফ্লাইটে গেলে তিন দিন করে থাকতে হয়। ব্যয়বহুল এই শহরে খাবার খরচ অত্যন্ত বেশি। ৮০০ ডলার পেলেও এর পুরোটাই খরচ হয়ে যায়। প্রতি মাসে সাত দিন লন্ডনের মতো শহরে খাওয়ার খরচ জোগাড় করা বেশ মুশকিল। স্থায়ীকরণ না হওয়ায় বিমান কতৃর্পক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন কেবিন ক্রুরা। এরপরও সাড়া না পাওয়ায় গত ৪ এপ্রিল বিমান কতৃর্পক্ষের কাছে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। এর জবাব না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে মামলা করেন ১৩৭ জন কেবিন ক্রু। গত ২ অক্টোবর সুপ্রিম কোটর্ মামলার রায়ে অস্থায়ী কেবিন ক্রুদের এক মাসের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের নিদের্শ দেন।