নাইকো মামলার শুনানি ফের ৩ জানুয়ারি

দুদকের আইনজীবীকে খালেদার টিপ্পনী

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুনীির্ত মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি পরবতীর্ দিন রেখেছে আদালত। বুধবার এ মামলার অন্যতম আসামি মওদুদ আহমদের অব্যাহতির আবেদনের আংশিক শুনানির পর ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির এ দিন ধাযর্ করে দেন। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কাযর্ক্রম চলছে। এই কারাগারেই আরেকটি ভবনে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন দুনীির্তর দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত ৮ নভেম্বর খালেদাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে এনে দীঘির্দন পর নাইকো দুনীির্ত মামলার শুনানি শুরু হয়। সেদিন মওদুদ আহমেদ তার অব্যাহতির আবেদনের ওপর নিজেই শুনানি শুরু করেন। বুধবারও তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ হয়নি। এদিন প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ নিবার্চনের কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন করেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ৩ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ দিতে বলেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগ গঠনের বাকি শুনানির জন্য নিবার্চনের পর ৩ জানুয়ারি দিন রাখেন। খালেদা জিয়া এদিনও আদালতে আসেন হুইল চেয়ারে করে। শুনানির একপযাের্য় বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “এত দ্রæত কেন বিচার শেষ করতে চাচ্ছেন? অন্য মামলায় তো এরকম চেষ্টা দেখি না।” অস্থায়ী এজলাসের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই কারাগারের ভেতরে বিচার হয় কীভাবে? এখানে তো পরিবেশ নাই।” খালেদা জিয়া বলেন, “বহু স্পশর্কাতর ও গুরুত্বপূণর্ মামলা রয়েছে, যেগুলোর বিচার দ্রæত করা হয় না।” নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যা মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কৈ এই মামলার বিচার তো তাড়াতাড়ি করা হলো না?” জনসন রোডের মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবন ও রেবতী ম্যানসনের এজলাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওখানেই তো স্বাভাবিক বিচার চলছিল। তবে এখানে বিচারের কী কারণ? এ মামলার বিচার স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না। অস্বাভাবিক দ্রæততায় চালানো হচ্ছে।” আদালত কক্ষে তার আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিয়েও অসন্তোষ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, “পুলিশ সিকিউরিটির কথা বলে কেন আমার এত কাছাকছি অবস্থান নেয়? তাদের কারণে আমি আইনজীবীদের দেখতে পাই না। তাদের কথা শুনতে পারি না। পুলিশ প্রবেশপথে থাকুক, এজলাসে নয়।” শুনানির একপযাের্য় তার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রতিপক্ষ দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে কটাক্ষ করে বলেন, “তাকে প্রতিমন্ত্রী করে এ মামলা পরিচালনার পুরস্কার দেবে আওয়ামী লীগ।” তার কথা টেনে খালেদা জিয়া বলেন, “না, তাকে ফুল মন্ত্রী করে দেবে।” তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজল তার উদ্দেশে বলেন, “ম্যাডাম, আমার জন্য দোয়া করবেন।” ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালে ৯ ডিসেম্বর তেজগঁাও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। গত বছর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরুর পর খালেদা জিয়া ও মওদুদ আহমদ ছাড়া বাকি সবার অব্যাহতির আবেদনের শুনানি আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে না পারায় এবং মওদুদের সময়ের আবেদনে এ শুনানি আটকেছিল গত প্রায় এক বছর ধরে।