বিশেষ সাক্ষাৎকারে স্বাচিপের মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ

একশ্রেণির মানুষ সদির্-কাশি হলেও বিদেশে চলে যায়

বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালে দুই মেয়াদে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম মহাসচিব হন। পরে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। বতর্মানে তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের প্রধান নিবার্হী (সিইও)। সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাসেবা নিয়ে দৈনিক যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রিপোটার্র জাহিদ হাসান
বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ Ñযাযাদি
যাযাদি: চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রথমেই জানতে চাই, আন্তজাির্তক মানের দিক থেকে এ রোগের চিকিৎসাসেবায় বাংলাদেশ কোন অবস্থানে আছে? ডা. এমএ আজিজ : শুধু চোখের রোগই নয়, অনেক চিকিৎসাই বাংলাদেশে আন্তজাির্তক মানের সেবা দিচ্ছে। চোখের বিভিন্ন চিকিৎসা যেমন- ফ্যাকো সাজাির্র, পোস্ট অপারেটিভ সেগমেন্ট সাজাির্র, ভিক্টোরেটিনা সাজাির্র ছাড়াও লেজারথেরাপি চিকিৎসা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও হচ্ছে। যাযাদি : আপনি জানেন, ১৬ নভেম্বর চোখের চিকিৎসা দিতে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল ‘অরবিস’ বাংলাদেশে আসবে। নিজেরা স¦য়ংসম্পূণর্ হলে অরবিসের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কেন? ডা. এমএ আজিজ : দেশে চক্ষুরোগের অনেক ধরনের চিকিৎসা থাকলেও ছানিজনিত অন্ধত্ব বা ক্যাটারেক্ট চিকিৎসা দেশের সব জেলায় সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের ন্যাশনাল আইকেয়ার কমর্সূচির সঙ্গে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্যা বøাইন্ড (বিএনএসবি), লায়ন্সসহ কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ রকমভাবে ‘অরবিস’ও দেশে চক্ষুসেবায় প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। তবে ‘অরবিস’ আসায় নতুন কিছু হচ্ছে এমন কিছু নয়। যাযাদি: সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিষেশত্ব নিয়ে কিছু বলুন । ডা. এমএ আজিজ : ২০১২ সালে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের যাত্রা। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া অন্যতম একটি পদক্ষেপ। তাছাড়া সরকারের একার পক্ষে সারাদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ৬০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা হচ্ছে বেসরকারি পযাের্য়। এজন্য সরকার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে উৎসাহ দিয়ে সেখানে ১০ শতাংশ শয্যা গরিব রোগীদের বরাদ্দ রাখার শতাের্রাপ করেছে। যদিও একটা সময় ছিল, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভতির্ নিয়ে সমালোচেনা হতো যে, যাদের মেধা নেই তারাই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন। তবে বতর্মান সরকার এটাকে স্বচ্ছতায় নিয়ে এসেছে। এখন মেডিকেল কলেজগুলোতে একই প্রশ্নপত্রে ভতির্ পরীক্ষা হচ্ছে এবং মেধাক্রম অনুসারে প্রথমে সরকারি, পরে বেসরকারি মেডিকেলে ভতির্র সুযোগ হচ্ছে। এসব মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষাথীর্রা যোগ্যতা নিয়ে চিকিৎসক হচ্ছেন। এমনকি সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকদেরও পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএমডিসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতো এখানেও একটি পদোন্নতি কমিটি আছে। আরেকটা বিষয় হলো, ৫০০ বেডের হাসপাতাল হলেই সেটা বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হয় না । কিন্তু সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ একটি বিষেশায়িত হাসপাতাল। কারণ এখানে কাডির্য়াক সাজাির্রর পাশাপাশি আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, ডায়ালাইসিস কেন্দ্র, বøাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, স্ট্রোক সেন্টার ও অত্যধুনিক ল্যাবরেটরির সুবিধা আছে। এখানে সাধারণ রোগীদের ৫০ টাকা টিকিটে সেবা দেয়ার আলাদা আলাদা ওয়াডের্র ব্যবস্থা আছে। যাযাদি : মেডিকেল কলেজ নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কী? ডা. এমএ আজিজ : যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভালো করছে সরকার সেখানে বিএসসি নাসির্ং ও ডেন্টাল কলেজ চালুর পরামশর্ দিয়েছে। এ বিষয়ে দ্রæত উদ্যোগ নেবেন। কারণ নাসির্ং সেবা খুব উন্নত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এটা প্রয়োজন। যাযাদি : অনেকে এখনও চিকিৎসা সেবায় বিদেশ নিভর্র। দেশে কী আন্তজাির্তক মানের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব নয়? ডা. এমএ আজিজ : ভারতের বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ভালো চিকিৎসা হয়। এটা দেখে ১৯৯৬ সালে সরকার মেডিকেল চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে অনেকাংশে শুল্ক ছাড় দেয়। তখন বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন এবং বড় বড় হাসপাতাল করেন। বতর্মানে দেশের ৬০ থেকে ৭০টা প্রতিষ্ঠানে আন্তজাির্তক মানের কাডির্য়াক সাজাির্র হচ্ছে। ফলে কাডির্য়াক সাজাির্র জন্য বিদেশে যাওয়া কমেছে। তবে এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যারা সাধারণ সদির্-কাশি হলেও বিদেশে যান। দেশের মানুষের জানা দরকার শুধু সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলেই এখন পযর্ন্ত প্রায় ৪০০ কাডির্য়াক সাজাির্র সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া দেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান আইন আছে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, লেপারোস্কপি ও গলবøাডার সাজাির্র হচ্ছে। তাই দেশে আন্তজাির্তক মানের চিকিৎসা সম্ভব নয়, এটা মানবেন না। এছাড়া একসময় বাংলাদেশে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল ছিল না। এখন কিন্তু নিউরোসাইন্স, ইএনটি (নাক-কান-গলা), গ্যাস্ট্রো-এন্টারালোজি, মেন্টাল, কাডির্য়াক, আই ইন্সটিটিউটসহ সব বিষয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল হচ্ছে। যাযাদি: এসব প্রতিষ্ঠান কী আন্তজাির্তক মান ধরে রাখতে পারছে? ডা. এমএ আজিজ : আমি বলব, অবশ্যই পারছে। কেননা দেশের নিউরোসাইন্স ও আই ইন্সটিটিউটে আন্তজাির্তক মানের চিকিৎসা হচ্ছে। এজন্য সরকার বাইরের টেকনোলজি, প্রশিক্ষণ সুবিধা আদান-প্রদান করছে। পাশাপাশি চিকিৎসক সোসাইটিগুলো যেমন আই সোসাইটি, সাজাির্র সোসাইটি নিজেরা উন্নত দেশের ট্রেনিং নিচ্ছে এবং দিচ্ছে। এভাবে হেল্থ টেকনোলজিগুলো ট্রান্সফার হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও মুগদা নাসির্ং ইন্সটিউিটে একটি সাজাির্র বিষয়ক কনফারেন্স যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এসেছিলেন যিনি পায়ুপথ সাজাির্রর আবিষ্কারক। তিনি এদেশের সাজাির্র চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। যাযাদি: দেশে বেসরকারিভাবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ইন্সটিটিউট হচ্ছে এটা ভালো দিক। কিন্তু সম্প্রতি টিআইবির এক গবেষণায় বলছে মুনাফাভিত্তিক বাণিজ্য করছে এসব প্রতিষ্ঠান। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন আপনি? ডা. এমএ আজিজ : আগেই বলেছেন এখনো ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিভাবে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারও এগুচ্ছে। তারপরও বেসরকারি খাতে অসামঞ্জস্যতা বা অতিরিক্ত মুনাফা কিংবা অনিয়ম বন্ধে চিকিৎসা সেবা আইন করতে যাচ্ছে সরকার। যা কাযর্কর হলে রোগী, চিকিৎসক ও হাসপাতালের মালিকপক্ষ আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। এভাবে তিনটা পক্ষই আদালতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তখন দুনীির্ত কমে আসবে। তাই টিআইবি যেগুলো বলেছে- সরকার কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলো কাযর্কর পদক্ষেপ নিচ্ছে। যাযাদি: বেসরকারি খাতে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে সাধারণের মধ্যে হতাশা আছে। এটি কমিয়ে আনা সম্ভব কিনা? ডা. এমএ আজিজ : এটা আপেক্ষিক বিষয়। তবে পৃথিবীর সব দেশের তুলনায় এদেশের স্বাস্থ্যখাতের চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা কম। যেমন, কয়েক বছর আগে লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর ১৬০টি দেশের চিকিৎসা খরচ নিয়ে জরিপ করে দেখেছে যে, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যয় সবচেয়ে কম। এছাড়া এ বিষয়ে যে আইন হচ্ছে, সেখানে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের রাশ টানা হয়েছে। যেমনÑ চেম্বারে চিকিৎসকের ফি চাটর্ টাঙ্গিয়ে রাখা। চিকিৎসকের ডায়াগনোসিসের ৪০ শতাংশ কমিশন নেয়ার যে অভিযোগ তা বদ্ধ করা। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা। এসব বন্ধ হলে ব্যয় অনেক ক্ষেত্রে আরো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে মনে করছেন। যাযাদি : আপনি তো একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাের্ন অংশ নিতে নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন । ডা. এমএ আজিজ : ‘জি, আমার নিবার্চনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ আসনে আমি কাজ করছি। আপনারা জানেন, ছাত্রজীবন থেকেই আমি রাজনীতি করি। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে প্রতিটা পরিবারের পাশে আছি। স্বাচিপ নেতা হওয়ার ফলে সাংগঠনিকভাবে এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সেখানে আমার একটা ভোট ব্যাংক আছে। সবমিলে নিজেকে আমি একজন যোগ্য প্রাথীর্ বলে মনে করি।’ ‘তাছাড়া আমি এলাকায় নমিনেশন চাইবো বলে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়েছি। আমি মনে করি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, নিজস্ব ভোট ব্যাংক ও দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এসব দিক দিয়ে এলাকায় আমি এগিয়ে আছি। দল চাইলে আমি নিবার্চন করব ইনশাল্লাহ।’ যাযাদি : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ডা. এমএ আজিজ : যায়যায়দিনকেও ধন্যবাদ ।