অগ্নিসংযোগকারীরা ছাত্রলীগ: রিজভী

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রুহুল কবির রিজভী
নয়া পল্টনে সংঘষের্র সময় পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। আবারও একতরফা নিবার্চনের লক্ষ্যে ‘বিরোধী দল শূন্য’ করতে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের প্রাথীর্ বাছাইয়ে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিতরণের তৃতীয় দিন বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে বিএনপি নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘষর্ হয়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন হেলমেট পরিহিত। এই হেলমেটধারীরা ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডার’ দাবি করে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। যারা আগুন দিয়েছে তারা পুলিশের প্রটেকশনে এই নাশকতা করেছে, এরা ছাত্রলীগ, যুবলীগের মহানগরের নেতা, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে ম্যাচের কাঠি নিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে যে ছেলে, সে গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা। নাম তার অপু। রিজভী তার এই পরিচয় দিলেও পুলিশ বলছে, ওই যুবক বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পল্টন এলাকার আহŸায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার কবীর। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও এক ফেসবুক পোস্টে অগ্নিসংযোগকারীকে ছাত্রদল নেতা ‘অপু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে তাকে গুলশান থানা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক অপু বলে প্রচার করার প্রেক্ষাপটে তাদের দেয়া ওই পোস্টে বলা হয়, তাদের গুলশান থানা কমিটির ওই নেতার নাম মাহবুবুর রহমান মিথুন। দুজনের ছবিও দেয়া হয়েছে ওই পোস্টে, যাতে তাদের চেহারা ভিন্ন বলে প্রতীয়মান হয়। ওই ছাত্রদল নেতাকে ধরতে অভিযান চলছে জানিয়ে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, নাশকতায় জড়িত অন্তত ১০ জনের পরিচয় সম্পকের্ তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। ঘটনার সময় এবং পরে প্রায় ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘এরা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।’ এই ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মিজার্ আব্বাসসহ প্রায় পৌনে দুইশত নেতাকমীর্র নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। তবে ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, পুলিশের গাড়ি, সেখান থেকে পুলিশ সরে গেল কেন? এটা তো পুলিশেরই কাজ। পুলিশের গাড়ির ওপর এই হেলমেট ধারী কে? আপনাদের মনে আছে এই হেলমেটধারী কী তাÐব করেছিল? ওই ঘটনার যে সব ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছে তাতে দেখা যায় লাঠি উঁচিয়ে বাড়ি দিতে উদ্যত এক হামলাকারীর সামনে গাড়ি থেকে নেমে উল্টো দিকে পালিয়ে যান একজন চালক। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের কয়েকটি ছবিতে হেলমেটপরা এক যুবককে দেখা গেছে বিক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে, যার কথা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যেও উঠে এসেছে। ওই যুবকের পরিচয় এখনও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস। নিবার্চনে তফসিল ঘোষণার পর এখনও নিবার্চন কমিশন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার কোনো নিদের্শনা না আসায় উদ্বেগ জানান রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রচুর পরিমাণ বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র দেয়া হয়েছে। নিবার্চনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমাদান অত্যন্ত জরুরি হলেও নিবার্চন কমিশন নিবির্কার ভূমিকা পালন করছে। এতেই প্রমাণিত হয়, ইসি বিশেষ দলের পক্ষেই নিবার্চনী মাঠ সমতল করতে ব্যস্ত রয়েছে। নিবার্চন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, কমিশন স্ববিরোধী বক্তব্য রাখছে। গতকাল তারা বলেছে যে, নয়া পল্টনে শোডাউন আচরণ বিধি লঙ্ঘন নয়। তাহলে কোন সাহসে পুলিশ বিএনপির উচ্ছ¡াসমুখর উপস্থিত নেতাকমীের্দর ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে? এটা কার নিদেের্শ এই পৈশাচিক আক্রমণ চালানো হয়েছে? ‘জনগণ বিশ্বাস করে বিএনপির নেতাকমীের্দর পুলিশের গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত করার নিদের্শদাতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তিনি ইসিকে দিয়ে এই কাজটি করিয়েছেন। একতরফা নিবার্চনে জয়লাভ করতে বিরোধীদল শূন্য করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে এই নাশকতা করা হয়েছে।’ রিজভী বলেন, প্রথমেই পুলিশ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মিছিলে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত করে। এই গাড়িচাপায় অন্তত ২০ জনের অধিক নেতাকমীর্ আহত হয়েছে। পুলিশ কীভাবে জনগণের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিল, সেটি নিবার্চন কমিশনের কাছে জানতে চাই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন ওবায়দুল কাদের যে প্রশ্ন তুলেছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বলতে চাই, জনগণ এই মুহূতের্ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। তারপরে বিএনপির প্রধানমন্ত্রীর কে হবে, তা তারাই নিধার্রণ করবেন। গণতন্ত্রের লড়াই করে করে গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াই এদেশের প্রধানমন্ত্রী, জনগণের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা জনগণ স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে খুলনা, কক্সবাজার, বগুড়া, বরগুনা, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার নেতাকমীের্দর তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেয়াজসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।