অগ্নিসংযোগকারীরা বিএনপির: পুলিশ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
আসাদুজ্জামান মিয়া
নয়াপল্টনে সংঘষের্র মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তারা সবাই বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীর্। আগের দিনের ওই সংঘষের্র জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপি বলছে, তাদের সহযোগিতা নিয়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ‘ক্যাডাররা’ সহিংস কমর্কাÐ করে তার দায় তাদের ওপর চাপাতে চাইছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নিবার্চন বানচালের ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে’ বিনা উসকানিতে এই হামলা চালিয়েছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সোসের্র মাধ্যমে আমরা অনেকের পরিচয় পেয়েছি এবং তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা সকলেই বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কমীর্।’ তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কমর্কতার্ জানান, নাশকতায় জড়িত অন্তত ৩০ জনকে শনাক্ত করেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘হেলমেট ছাড়া যে দেশলাই দিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তার পরিচয় মিললেও হেলমেট পরা যে গাড়িতে লাফাচ্ছে তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গাড়ি ঘিরে যারা উল্লাস করছে তাদের অধিকাংশের পরিচয় মিলেছে।’ ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে যে যুবককে দেশলাই নিয়ে গাড়িতে আগুন জ্বালাতে দেখা যাচ্ছে তিনি ছাত্রদলের পল্টন এলাকার আহŸায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার কবীর বলে জানান তিনি। ওই পুলিশ কমর্কতার্ বলেন, ‘তাকে ধরতে পল্টন এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘অন্তত ১০ জনের পরিচয় সম্পকের্ আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি। গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে।’ ঘটনার সময় এবং পরে প্রায় ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মিশু বিশ্বাস বলেন, এরা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এই ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজার্ আব্বাসসহ প্রায় পৌনে দুইশ নেতাকমীর্র নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। একাদশ সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে ওঠার মধ্যে বুধবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কাযার্লয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকমীের্দর ব্যাপক সংঘষর্ হয়। ওই সময় কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যিনি আগুন দিয়েছেন তাকে ফুটেজে পরিষ্কার দেখা গেছে, গাড়ির উপরে দঁাড়িয়ে তাÐব যারা করেছে তাদের দেখা যাচ্ছে। বুকের কাপড় খুলে লম্বা লাঠি দিয়ে যে তাÐব নৃত্য আমরা দেখেছি, সেটাও মিডিয়ার সুবাদে দেশবাসী দেখেছে।’ এই হামলা পূবর্পরিকল্পিত বলে মনে করছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘হামলায় পঁাচজন অফিসারসহ মোট ২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যারা এই মুহূতের্ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লাঠি দিয়ে, বঁাশ দিয়ে পেটানো হয়েছে। ইটপাটকেল ছুড়ে পেটানো হয়েছে। এটিএন নিউজে পরিষ্কারভাবে এসেছে, একজন পুলিশকে পেছন থেকে কীভাবে মারতে মারতে ধাওয়া করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ‘পুলিশকে শুধু মারা না, হামলা বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর একটা পূবর্পরিকল্পনা ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রেখেছি।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা বল প্রয়োগে যাইনি। বল প্রয়োগে গেলে নিবার্চনের পরিবেশ নষ্ট হবে।’ গ্রেপ্তার ৬৫ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হামলা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল পযর্ন্ত ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পল্টন মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে। বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা তিনটি দায়ের করে। পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কতার্ (ওসি) মাহমুদ হোসেন এসব নিশ্চিত করেছেন। পল্টন থানা সূত্র জানায়, মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজার্ আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলটির অন্যান্য শীষর্ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ এসব মামলায় এ পযর্ন্ত ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।