এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে এখনো অতিরিক্ত ফি আদায়

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

এস এম মামুন হোসেন
এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অথর্ আদায় বন্ধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিলেও তা পরোয়া করছে না অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শহরের পাশাপাশি গ্রামঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগের মতো এসএসসির ফরম পূরণের ক্ষেত্রে নানা খাতে বাড়তি অথর্ আদায় করছে। ২০১৯ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের ফরম পূরণ চলছে এখন। এ ফরম পূরণের ক্ষেত্রে হাইকোটের্র নিদের্শ এবং সরকারি নিয়ম অনুসারে ফি আগে থেকেই ঠিক করে দেয়া আছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ক্ষেত্রে মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৬৫০ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ১৭৭০ টাকা নিধার্রণ করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহর থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে নিধাির্রত এ ফির কয়েকগুণ বেশি অথর্ আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দুদক বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়তি ফি আদায়ের কারণে অভিযান চালিয়েছে। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। অভিযানে বাড়তি ফি আদায়ের সব তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পরেও কেনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নে দুদকের কমর্কতার্রা অবশ্য যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের আইনগত সীমাবদ্ধতার রয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের নিয়ম সারা দেশে দীঘির্দন ধরে চলে আসায় তা একদিনে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এবং এ জন্য এসব বিদ্যালয়কে সতকর্ করা এবং ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছে দুনীির্তবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতের নিদেের্শ নিধাির্রত ফি না নিয়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফি নিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষেত্রবিশেষ তা ১০ হাজার টাকা পযর্ন্ত গিয়েও ঠেকছে। নিধাির্রত ফির বাইরে কোচিং, র‌্যাগ, শিক্ষাথীর্ কল্যাণ, শিক্ষক উন্নয়ন বা বিবিধসহ বিভিন্ন নামে- বেনামে এসব ফি আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে, দনিয়া একে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গালর্স আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাড়তি ফি নেয়ার কারণে এরই মধ্যে দুনীির্ত দমন কমিশন অভিযান চালিয়েছে। রাজধানীতে দুনীর্ত দমন কমিশনের তৎপরতায় বাড়তি ফি নেয়ার বিষয়গুলো সমানে আসলেও রাজধানীর বাইরের বিষয়গুলো সামনেই আসছে না বলেও জানা গেছে। রাজধানীর বাইরে যেসব স্থানে যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে তার প্রায় সবর্ত্রই বাড়তি ফি নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পটুয়াখালী জেলার বাউফল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খেঁাজ নিয়ে দেখা গেছে এখানে ১৭শ’ টাকার ফি নেয়া হচ্ছে চার হাজার টাকা। গাজীপুরের শাহীন ক্যাডেট একাডেমিতে খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফি নেয়া হচ্ছে ৪২শ’ টাকা। যদিও এ বিভাগে সরকার নিধাির্রত ফি ১৭৭০ টাকা। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও একই রকমের ফি নেয়া হচ্ছে বলে যায়যায়দিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ফরম পূরণ শুরু হওয়ার পর বাড়তি ফি নেয়া বন্ধে দুদুকের পক্ষ থেকে হটলাইনে (১০৬) ফোন দিয়ে বাড়তি ফি নেয়ার অভিযোগ জানাতে বলা হয়। সে অনুসারে এখন পযর্ন্ত কয়েক হাজার ফোন দুনীির্ত দমন কমিশনে এসেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অতিরিক্ত অথর্ আদায়ের কারণে দুদকের পক্ষ থেকে যে অভিযান পরিচালনা করা হয় তার নেতৃত্ব দেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান ও উপসহকারী পরিচালক জিএম আহসানুল কবীর। তিনি জানান, তারা অভিযানে গিয়ে দেখতে পেয়েছে, ছয় হাজার টাকা ফি নেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। অভিযানকালে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন বলে দুদুক কমর্কতার্রা জানিয়েছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টি নিধাির্রত ফির বাইরে কোচিং, মডেল টেস্ট র‌্যাগডেসহ আরও কয়েকটি নামে-বেনামে ছয় হাজার টাকা ফি নিয়েছে। পরে দুদক কমর্কতাের্দর নিদেের্শ নিয়মবহিভ‚র্ত এসব ফি না নেয়ার অঙ্গীকার করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। অন্যান্য স্থানে গিয়েও একই রকমের চিত্র দেখতে পেয়েছে দুদকের কমর্কতার্রা। তবে অনিয়মের সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্নে দুদক কমর্কতার্রা জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে দুনীির্ত দমন কমিশনের আইনগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে দুদকের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের অনিয়ম দীঘির্দন ধরে চলে আসছে। আমরা এ বিষয়ে সতকর্ করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’ এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ শামসুল হুদা জানিয়েছেন, ‘নিধাির্রত ফির বাইরে অথর্ নেয়ার সুযোগ নেই। অবৈধভাবে অথর্ আদায়ের অভিযোগ পেলে এসব বিদ্যালয়ের প্রধান এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরকে শোকোজ করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে এমপিওভুক্তি বাতিলেরও এখতিয়ার রয়েছে আমাদের।’