বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
মহামারি করোনা

বিশ্বে সংক্রমণ-মৃতু্যর গতি লাগামহীন

জ্জ আরও প্রায় ৯ হাজার মৃতু্য, শনাক্ত সাড়ে ৩৪ লাখ জ্জ ভারতে শনাক্ত সাড়ে তিন লাখ, মৃতু্য সাত শতাধিক
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতু্য যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই ভাঙছে আগের দিনের রেকর্ড। যেমন গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃতু্যর সংখ্যা আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। এই সময়ে সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ। আর ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার। সংবাদসূত্র : এএফপি, ওয়ার্ল্ডোমিটার, এনডিটিভি

গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, মেক্সিকো ও ব্রাজিল। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার। অন্যদিকে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত, মৃতু্য ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট 'ওয়ার্ল্ডোমিটার' থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আট হাজার ৮৫৭ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় মৃতু্য বেড়েছে প্রায় ৫০০। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ছাড়িয়েছে।

একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন

করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৪ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সোয়া এক লাখের বেশি। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৩৮ লাখের বেশি।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ২৩ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৫২২ জন। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাত কোটি ৫৪ লাখের বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আট লাখ ৮৩ হাজার ৯০৩ জন মারা গেছেন।

অন্যদিকে, দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৮৪ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৫০ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৯ লাখ ৩৮ হাজার ২৬১ জন এবং মৃতু্য হয়েছে তিন লাখ ২৪ হাজার ৬০ জনের।

ভারতে শনাক্ত সাড়ে তিন লাখ

মৃতু্য সাত শতাধিক

এদিকে, সময় যত গড়াচ্ছে, ভারতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃতু্যতে দেশটিতে প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। বিধিনিষেধ, সতর্কবার্তা, টিকাদান- কোনো কিছুইতেই দেশটির করোনা সংক্রমণের গতিতে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। শুক্রবার দেশটিতে সংক্রমণ প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছেছে। প্রাণহানিও ছাড়িয়েছে ৭০০।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে তিন লাখ ৪৭ হাজার ২৫৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১৭ হাজার ৫৩২। অর্থাৎ, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। যা বৃহস্পতিবারের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭০৩ জন। বৃহস্পতিবার মৃতু্য হয়েছিল ৪৯১ জনের। করোনা মহামারির শুরু থেকে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট চার লাখ ৮৮ হাজার ৪২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশটির দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর এটিই বেশি চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের। ভারতে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৯২ জন করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে (ধরন) আক্রান্ত হয়েছেন।

ভারতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ করোনার সক্রিয় রোগী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ১৮ হাজার ৮২৫ জন। যা আগের দিনের থেকে প্রায় ৯৪ হাজার বেশি। এই সংখ্যাটি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

যদিও পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারির শুরু থেকে ভারতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ জন করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন প্রায় দুই লাখ ৫২ হাজার মানুষ।

এছাড়া ভারতে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ১৬০ কোটি ৪৩ লাখের বেশি ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাদানের পাশাপাশি আগের মতোই জোরগতিতে চলছে কোভিড পরীক্ষাও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রায় ১৯ লাখ ৩৬ হাজার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের 'সি-ফুড' মার্কেটে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস 'সার্স-কোভ-২'। যা পরে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায় 'নভেল করোনাভাইরাস' নামে। চীনে করোনায় প্রথম রোগীর মৃতু্য হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি।

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি। ওই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে 'জরুরি পরিস্থিতি' ঘোষণা করে সংস্থাটি। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২২২টি দেশ ও অঞ্চলে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে