করোনায় সংক্রমণ, মৃতু্য বাড়ছেই

ওমিক্রনে কাঁপছে বিশ্ব

এক দিনে সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৩৫ লাখ, মৃতু্য প্রায় ৯ হাজার ভারতে সামান্য নিম্নমুখী কোভিড গ্রাফ, ওমিক্রন ছড়াচ্ছে

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:২২

যাযাদি ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃতু্য বাড়ছেই। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতু্যতে আগের দিনের রেকর্ড ভাঙছে। এর মধ্যেই সবচেয়ে সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ওমিক্রনের দাপটে কাঁপন ধরেছে বিশ্বে। পরিসংখ্যান বলছে, শুক্রবার বিশ্বজুড়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ জন আর এ রোগে একই দিন মৃতু্য হয়েছে ৮ হাজার ৮৯১ জনের। আক্রান্ত-মৃতু্যর এই হার আগের দিন বৃহস্পতিবারের চেয়ে কিছু বেশি। ওই দিন বিশ্বে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ছিল আট হাজার ৮৫৭ জন। সংবাদসূত্র : এএফপি, ওয়ার্ল্ডোমিটার, এনডিটিভি ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে করোনায় আক্রান্ত, মৃতু্য ও সুস্থতার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট 'ওয়ার্ল্ডোমিটার' জানিয়েছে, শুক্রবারের পর বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা ৫৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই হিসাব শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ও মৃতের হিসাবে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক মাস ধরে দৈনিক সংক্রমণ-মৃতু্যও সবচেয়ে বেশি ঘটছে ওই দেশটিতেই। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৭৭ হাজার ৫১২ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৭৭৪ জন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য যেসব দেশে এই দিন সংক্রমণ ও মৃতু্যর উচ্চহার দেখা গেছে, সে দেশগুলো হলো ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানি আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্য। বিশ্বে বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৫৪ জন। এই রোগীদের মধ্যে কোভিডের মৃদু উপসর্গ বহন করছেন ছয় কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৫ জন এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন ৯৫ হাজার ৯০০ জন। এছাড়া শুক্রবার করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৬ জন। এ নিয়ে মহামারির গত দুই বছরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ২৭ কোটি ৭০ লাখের ঘর। ভারতে সামান্য নিম্নমুখী কোভিড গ্রাফ, তবে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে এদিকে, মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় টালমাটাল পরিস্থিতির ভারত শনিবার কিছুটা স্বস্তির কথা শুনিয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে কোভিড পজিটিভ তিন লাখ ৩৭ হাজার ৭০৪ জন। শুক্রবারের তুলনায় যা প্রায় ১০ হাজার কম। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্টে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এই মুহূর্তে তা ১০ হাজার ৫০ জন। দেশটির সরকারি হিসাব বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ওমিক্রনে সংক্রমণ প্রায় ৩.৭ শতাংশ বেড়েছে। আর এক দিনে মারা গেছেন ৪৮৮ জন, শুক্রবারের তুলনায় খানিকটা কম। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক দিনে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ জন, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখের কম। এই মুহূর্তে দেশটিতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৫। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৯ লাখ ৭০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে 'পজিটিভিটি রেট' ১৭.২২ শতাংশ। গত কয়েকদিন ধরেই যা ঊর্ধ্বমুখী। পরিসংখ্যান বলছে, সংক্রমণের তালিকার শীর্ষে মহারাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু ও গুজরাট। দেশের দৈনিক সংক্রমণের ৫৬ শতাংশই এই পাঁচ রাজ্যের। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত এই কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়েছে মোট ১৬১ কোটি ডোজ করোনা টিকা। উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের 'সি-ফুড' মার্কেটে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস 'সার্স-কোভ-২'। যা পরে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায় 'নভেল করোনাভাইরাস' নামে। চীনে করোনায় প্রথম রোগীর মৃতু্য হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। উহান শহরের প্রথম যে ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যখন মারা যান, চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন বলেছিল, অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি। ওই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে 'জরুরি পরিস্থিতি' ঘোষণা করে সংস্থাটি। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২২২টি দেশ ও অঞ্চলে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।