মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
কারিগর মফিজের গল্প

ভোলায় প্রথম বাণিজ্যিক বরই চাষ

এমএইচ শিপন, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)
  ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা কাচিয়া ইউনিয়নে মফিজের বাগান থেকে বরই তুলছেন কৃষক -যাযাদি

ভোলা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ হয় না। জেলার প্রতি বাড়িতে দু'একটা টক বা মিষ্টি জাতের বরই গাছ দেখা যায়। ফল ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে বরই এনে চাহিদা পূরণ করে। তবে এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন মাইনুদ্দিন হাওলাদার মফিজ। তার বাগান দেখে অনেকে বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডে সাড়ে ৪ একর জমিতে মফিজ বরই বাগান গড়ে তুলেছেন। গাছগুলো চার থেকে সাড়ে চার ফুট উচ্চতার। গাছভর্তি আপেলের মতো লাল বরই দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন এলাকার লোক তার বরই বাগান দেখতে আসছেন।

মফিজ তার বাগানে বেশিরভাগ বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করেছেন। এছাড়া কাশ্মিরী জাতের বরইও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন। বরই গাছের চারা সংগ্রহ করেছেন নাটোর থেকে। চারা লাগানোর ২২-২৩ মাসের মধ্যেই ফুল এসেছে। এখন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এ বরই দেখতে সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। এ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। ৩০ ফাল্গুন পর্যন্ত ২২-২৩ লাখ টাকা বিক্রি নামবে বলে মফিজ জানান। তবে একটি কীটনাশক কোম্পানির পরামর্শে ফুল আসার সময় ওষুধ দেয়ায় গাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হলে বিক্রি কমপক্ষে আরও ৫ লাখ টাকা বেশি হতো বলে তার মত। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ বরই বিক্রি করছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

পড়াশোনায় মফিজ এসএসসি'র গন্ডি পেরোতে পারেনি। ২ বছরের এক কন্যা সন্তানের জনক। মফিজ বলেন, আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও। কৃষি কাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। বরই বাগান ছাড়াও থাই পেয়ারা, মাল্টা বাগান, সবজি বাগানে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো আমার বিনিয়োগ। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি পছন্দসই ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ওইদিকে আমার মন টানে না। এ নিয়ে কিছুটা পারিবারিক মনোমালিন্যও হয়েছে। তবে এ কাজে আমি আনন্দ পাই।'

মফিজ আরও বলেন, বছর দুই আগে আমি উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলায় চলে

যাই। সবকিছু জেনেশুনে নাটোর থেকে বলসুন্দরী জাতের বরই চারা নিয়ে আসি। এ বরই'র বৈশিষ্ট্য হলো এটা দেখতে আপেলের মতো। যথেষ্ট পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এছাড়া এ জাতের বরই'র বিচি অনেক ছোট। বড়ই বাগানের জমি লিজে নেওয়া। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০-১১ লাখ টাকা। ক্ষেতে রাসায়নিক ও জৈব সার দুটোই প্রয়োগ করা হয়েছে। এ বছর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। তবে পাখি, বাঁদুড় মিলে লাখ খানেক টাকার বরই খেয়ে ফেলে। এ বছর প্রথম সিজন হওয়ায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। আগামী বছর খরচ কম হবে। কারণ বরই চারা কিনতে হবে না। সেচ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো খরচ আর হচ্ছে না।

মফিজের মতে কৃষিতে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে নিয়ে কাজ করলে লোকসান হবার কথা নয়। তার স্বপ্ন কৃষির পাশাপাশি গরু, ছাগল আর ভেড়ার একটি আধুনিক ফার্ম করার। তবে এটার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, কৃষি অফিস মফিজকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। তাকে জৈব ও রাসায়নিক সার সরবরাহের পাশাপাশি সেচের জন্য বরই ক্ষেতে ডিপ ইরিগেশন সিস্টেম বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেকার যুবকদের জন্য মফিজের কাজ একটি অনন্য উদাহরণ।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুর রহমান বলেন, মফিজের মতো উদ্যোক্তাদের সাধ্যমত সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে