প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার লাইনে চলছে ৪ বগির ট্রেন

পাবনার মাঝগ্রাম ঢালারচর রেলপথ

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রাচীন জনপদ পাবনা জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল রেলপথের। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় প্রায় ৭৮ কিলোমিটার রেলপথ। জেলার মাঝগ্রাম থেকে ঢালারচর রেলপথে চারটি বগি দিয়ে চলছে একটি মাত্র লোকাল ট্রেন। যা জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ছয়টি উপজেলাকে দেশের রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে এক হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মাঝগ্রাম থেকে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত প্রায় ৭৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। যেখানে রয়েছে অবকাঠামোগত সব সুযোগ-সুবিধা। ২০১৮ সালের জুনে একটি আট বগিবিশিষ্ট লোকাল ট্রেনের মাধ্যমে চালু হয় নবনির্মিত এই রেলপথ। ঢালারচর স্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখে একবার যাতায়াত করে এই লোকাল ট্রেনটি। যদিও আট বগির লোকাল ট্রেনটি এখন চার বগিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ফলে প্রত্যাশিত কোনো রেলসেবাই পাচ্ছেন না জেলার মানুষ। পাবনা স্টেশনে কথা হয় রাজশাহীগামী ট্রেনযাত্রী কলিট তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'পাবনা জেলাবাসীকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হোক। আমরা শুধু ঢালারচর টু রাজশাহী যেতে চাই না। আমরা এই ট্রেন সেবার মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে যেতে চাই।' ঢালারচর স্টেশনে কথা হয় মাস্টার্স শিক্ষার্থী রাকিব হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এই ট্রেন আমাদের কোনো কাজে আসছে না। বর্তমানে ঢালারচর টু রাজশাহীগামী এই ট্রেনে যে যাত্রী হচ্ছে, সেসব কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত যাত্রী। শহরের কোনো যাত্রী জরুরি কাজে এই সেবা নিতে পারছেন না।' গণমাধ্যম কর্মী শাহীন রহমান বলেন, এই ট্রেনের যে সময়সূচি করা হয়েছে, সেটা রীতিমতো অবাক করার মতো। পাবনার কোনো মানুষ রাজশাহীতে গিয়ে না পারে অফিস করতে; আর না পারে সময় ধরে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে। সময়সূচি মোটেও কল্যাণকর নয়। ভুক্তভোগীরা জানান, রেলসেবা পাওয়ার লক্ষ্যে জেলার অধিকাংশ মানুষকে কয়েকটি উপজেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পাবনার ঈশ্বরদী নতুবা চাটমোহর রেলস্টেশনে। যেখানে ঢাকাগামী চারটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করে। এসব ট্রেনে পাবনার জন্য সিট বরাদ্দ মাত্র ১৫০টি। ফলে ঢাকা-পাবনা রেল সার্ভিস চালু ছিল স্থানীয়দের মূল দাবি। কিন্তু সেটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আমরা যদি ঢাকা যেতে চাই, তাহলে আমাদের ঈশ্বরদী নতুবা চাটমোহরকে বেছে নিয়ে যাত্রা করতে হয়। যা আমাদের পাবনাবাসীর জন্য খুবই কষ্টকর ব্যাপার। এই রেলপথে পাবনা এক্সপ্রেস নামে প্রথম ট্রেন দেওয়া হয়। অজ্ঞাত কারণে সেটির নাম পরিবর্তন করে ঢালারচর এক্সপ্রেস করা হয়। যা রীতিমতো পাবনাবাসীকে মর্মাহত করেছে। শিক্ষক এম হাসানুজ্জামান বলেন, সরাসরি ঢাকা-পাবনা একটি ট্রেন সার্ভিস দেওয়া হলে নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার রেলপথ বানিয়েছে। কিন্তু জেলাবাসীকে কাঙ্ক্ষিত রেলসেবা দিতে পারছে না। এতে জেলাবাসী হতাশ হয়েছেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ডক্টর এম আবদুল আলীম বলেন, নামকাওয়াস্তে একটি লোকাল ট্রেন চালু থাকায় এই অঞ্চলের মানুষ এই রেল থেকে সেই সুফল পাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ যদি একাধিক রেল সংযোজন করে, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ এই রেল থেকে সুফল ভোগ করতে পারবে। বর্তমান সরকারের যে লক্ষ্য, সেটি বাস্তবায়ন হবে। জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর একটি পুরনো ট্রেন দিয়ে ঢাকা-পাবনা ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি আটকে গেছে। এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশীর বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ট্রেনের কোচ সংকটের কারণে আপাতত এই প্রকল্পটি আটকে গেছে। পুরনো কোচ দিয়ে ট্রেন চালু করলে যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন না বলে কর্তৃপক্ষ সেটি আপাতত স্থগিত রেখেছে। পাবনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত যেতে তিনি কয়েক মাস আগেই একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে, নতুন কোচ আনার পর এই রুটে নতুন কোচ দিয়েই যাত্রীসেবা দেওয়া হবে।