শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা মহামারি

বিশ্বে সংক্রমণ -মৃতু্য সামান্য কমেছে

ম বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ ৩৫ কোটি পার, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৬ লাখ ম ভারতে ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু
ম যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

টানা কয়েকদিন বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃতু্যর ঊধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা সামান্য কমেছে। কমেছে আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ২৮ লাখে। আর বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ কোটি পার হয়েছে। অন্যদিকে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৬ লাখ ১১ হাজার। সংবাদসূত্র :এএফপি, ওয়ার্ল্ডোমিটার, এনডিটিভি

গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে। অন্যদিকে, দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, মেক্সিকো, ব্রাজিল ও পোল্যান্ড।

বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত, মৃতু্য ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয় হাজার ৩৫৬ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় মৃতের সংখ্যা কমেছে আড়াই হাজার। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৪৭২ জনে।

একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮৯৩ জন। অর্থাৎ, আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে সাড়ে সাত লাখের বেশি। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি দুই লাখ ৯৪ হাজার।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ জন এবং মারা গেছেন ১৬৭ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ৮১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক লাখ ২৮ হাজার ৫১৪ জন মারা গেছেন।

দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এখনো শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ১২ হাজার ৩১৪ জন এবং মারা গেছেন ৮৪১ জন। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাত কোটি ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আট লাখ ৮৮ হাজার ৬২৩ জন মারা গেছেন।

বিশ্বে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৮১ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৭ হাজার ২১২ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮৬ জন এবং মৃতু্য হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৪৩৩ জনের।

এছাড়া গত এক দিনে যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৭ জন এবং মারা গেছেন ২৯৭ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৭ জন মারা গেছেন।

ভারতে ওমিক্রনের গোষ্ঠী

সংক্রমণ শুরু

এদিকে, ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়েছে। আর ভাইরাসের দাপট বেশি দেশটির বড় শহরগুলোতেই। রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রকাশিত বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশটিতে করোনার গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখে। কীভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং তা রোখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা কী হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে এই কমিটি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেই কমিটি জানিয়েছে, ভারতে ওমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্টেরও হদিস মিলেছে।

গত ১০ জানুয়ারির বুলেটিনে কমিটি জানিয়েছিল, যদিও ওমিক্রনে সংক্রমিতদের অধিকাংশই উপসর্গহীন। তারপরও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সেইসঙ্গে আইসিইউ বেডের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে তৃতীয় ঢেউয়েও কোভিড নিয়ে আশঙ্কা দূর হয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

নতুন করে বলা হয়েছে, বর্তমানে ওমিক্রনের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ভাইরাস তার দাপট দেখাচ্ছে প্রধানত বড় শহরগুলোতেই। ফলে সেখানে দ্রম্নত বাড়ছে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা। তবে ওমিক্রনের অতি সংক্রমক উপ-ভ্যারিয়েন্ট খুব সামান্য মাত্রায় ভারতে সক্রিয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি আরও জানিয়েছে, এখন আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের থেকে ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার প্রসঙ্গটি থাকছে না, যেহেতু তা এরই মধ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণের চেহারা নিয়ে ফেলেছে। কমিটি আরও জানিয়েছে, মাস্ক পরা, ভিড় এড়ানো, স্যানিটাইজারের ব্যবহারের মতো করোনার বিধিনিষেধগুলো ও ভ্যাকসিনেশনই বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র ঢাল হতে পারে করোনার সঙ্গে যুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৩৩ হাজার ৫৩৩ জন। 'পটিজিভিটি রেট' ফের বেড়ে হয়েছে ১৭.৭৮ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে মহারাষ্ট্র খানিকটা স্বস্তির খবর শোনালেও নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দক্ষিণের রাজ্যগুলো। কেরালা, কর্ণাটকে আক্রান্তের সংখ্যাটা রীতিমতো ভয় ধরানোর মতো। আর গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃতু্য হয়েছে ৫২৫ জনের। এই সংখ্যাটাও আগের দিনের থেকে অনেকটা বেশি। এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৮৯ হাজার ৪০৯ জন।

এদিকে, ভারতের রাজধানী দিলিস্নতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃতু্যও। ছয় মাসের মধ্যে রাজধানীতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। যা গত ৫ জুনের পর সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। ৫ জুন ৬৮ জনের মৃতু্য হয়েছিল। দিলিস্নতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭৮ লাখ দুই হাজার ৫১৪ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৫ হাজার ৫৮৬ জন।

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অনুমোদিত শহরে এক সপ্তাহের কারফিউ জারি এবং পরিস্থিতি উন্নতির দিকে না যাওয়া পর্যন্ত দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ রাখার একটি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন দিলিস্নর লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজাল। তবে তিনি ৫০ শতাংশ মানুষের উপস্থিতিতে অফিস চালু রাখার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন।

উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) করোনাকে 'বৈশ্বিক মহামারি' হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে 'জরুরি পরিস্থিতি' ঘোষণা করে সংস্থাটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে