জাতীয় পাটির্র দুগর্ দখলে মরিয়া আ’লীগ-বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর উপজেলা)

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

উলিপুর প্রতিনিধি (কুড়িগ্রাম)
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাবিধৌত দেবী চৌধুরানী উপাখ্যান, মহারানী স্বণর্ময়ীর স্মৃতিবিজড়িত, অলি আউলিয়ার আশীবার্দপুষ্ট, পান-সুপারি, ধানে ভরপুর ডা. আব্বাছ আলী স্মৃতিবিজড়িতÑ এককথায় নাম তার উলিপুর। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন নিয়ে এ আসনে নানা হিসাব-নিকাশ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে জাতীয় পাটির্র দুগর্ হিসেবে খ্যাত দীঘির্দন যাবৎ এরশাদের দখলে থাকা এ আসনটি এবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় পাটির্ জেপি কব্জা করতে চায়। উলিপুর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৩ আসন। এ আসনের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা ঘরে বসে নেই। উপজেলার শহর-গ্রামগঞ্জ, হাট-বাজারের দশর্নীয় স্থানগুলোতে বিলবোডর্ ও পোস্টার শোভা পাচ্ছে। উঠান বৈঠক, দলীয় কমীর্সভাসহ বিভিন্ন কমর্সূচিতে অংশ নিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিগত দুটি পবিত্র ঈদ ও শারদীয় দুগার্পূজায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর থেকে এই আসনটি বিএনপির দখলে চলে যায়। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির পালাবদল ঘটে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর এই আসনটি জাতীয় পাটির্র দখলে আসে। দীঘির্দন পর ১৯৯১-এর নিবার্চনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন তালুকদার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। দেশে অন্যান্য আসনের তুলনায় এ আসনের একটু ভিন্নচিত্র। এলাকার ভোটাররা যখন যে দলের প্রাথীের্ক নিবাির্চত করেন তখন দেখা যায়, অপর দল বেশি আসন পেয়ে সরকর গঠন করে। এ আসনে বরাবর এমপি নিবাির্চত হন বিরোধী দলের। এ কারণে উন্নয়ন থেকে বরাবরই বঞ্চিত হতে হয় এ এলাকার সাধারণ মানুষকে। ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রæয়ারি সংসদ নিবার্চনে বিএনপি থেকে সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মাঈদুল ইসলাম নিবাির্চত হন। ওই বছর তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার পদত্যাগ করলে ’৯৬ নিবার্চনে মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন, বিএনপির এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, জাপা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। সে নিবার্চনে এরশাদ বিপুল ভোটে নিবাির্চত হলে উপ-নিবার্চনে তার ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালুকে মনোনয়ন দেন এরশাদ। উপ-নিবার্চনে আওয়ামী লীগ থেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুলু সরকার এবং বিএনপি থেকে এ কে এম মাঈদুল ইসলাম প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। নিবাির্চত হন জাপা প্রাথীর্ মোজাম্মেল হক লালু। ২০০১ সালের নিবার্চনে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে আসা অধ্যক্ষ মাওলানা মতিয়ার রহমান জাতীয় পাটির্ থেকে মনোনয়ন পান। বিএনপির এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন তালুকদার। সে নিবার্চনে জাপা প্রাথীর্ অধ্যক্ষ মাওলানা মতিয়ার রহমান নিবাির্চত হন। সে নিবার্চনে সরকার গঠন করে বিএনপি। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নিবার্চনে সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মাঈদুল ইসলাম বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পাটিের্ত যোগদান করলে এরশাদ মহাজোট থেকে তাকে মনোনয়ন দেন। ওই নিবার্চনে বিএনপি প্রাথীর্ ছিলেন সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা মতিয়ার রহমান, বিএনপি থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পাকিস্তান গণপরিষদের ডিপুটি স্পিকার আবুল কাশেমের কনিষ্ঠ পূত্র এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি তাসভির উল ইসলাম এবং মাহাজোট থেকে মনোনয়ন না পাওয়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ফুলু সরকার স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হয়ে নিবার্চনে অংশ নেন। ওই নিবার্চনে মাঈদুল ইসলাম বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। এছাড়া ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি মহাজোটের এক তরফা নিবার্চনে মাঈদুল ইসলাম বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিবাির্চত হন। মাঈদুল ইসলামের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হলে ২৫ জুলাই এর উপ-নিবার্চনে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ অধ্যাপক এম এ মতিনকে হারিয়ে জাতীয় পাটির্র অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার বিজয়ী হন। মনোনয়নের জন্য ইতোমধ্যে গণসংযোগ করছেন বতর্মান এমপি জাতীয় পাটির্র অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জনসংযোগ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস মতি শিউলি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রাথীর্ হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক, জাতীয় পাটির্র (জেপি) প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক ও উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম আহŸায়ক মোবাশ্বের নেছারী। আসন্ন নিবার্চনে এরশাদের জাতীয় পাটির্ মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে এককভাবে নিবার্চনে অংশ নিলে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ ও বাংলাদেশ জাতীয় পাটির্র জেপির প্রাথীর্র সাথে ত্রিমুখী প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি হতে পারে আর যদি মহাজোট থেকে জাপার প্রাথীর্ মনোনয়ন দেয় তাহলে বিএনপির প্রাথীর্ জয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি বলে এলাকার নবিন ভোটাররা মনে করেন। আবার বিএনপির তৃণমূল নেতাকমীের্দর দাবি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল খালেককে মনোনয়ন দিলে মহাজোট প্রাথীর্র সাথে লড়াই হবে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূণর্। কারণ বিএনপিতে কোনো গ্রæপিং না থাকায় উপজেলা পরিষদ নিবার্চন ও পৌরসভার নিবার্চনে নিজেদের প্রাথীের্দর জিতিয়ে নিয়েছে বিএনপি। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ৫৬৭টি জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪ জন মাত্র।