নবান্নে মাছের মেলা

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শিবগঞ্জ (বগুড়া) সংবাদদাতা
বগুড়ার শিবগঞ্জে নবান্ন উৎসবে মাছের মেলায় বিশালাকার কাতলা মাছ কিনে বিজয়ীর হাসি ক্রেতার মুখে Ñযাযাদি
বগুড়ার মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই ইট বিছানো একটি পথ। মোড়ে দঁাড়াতেই বেশ দূর থেকে মাইকের শব্দ কানে ভেসে আসে। শুনতে পাওয়া যায় মাছ বিক্রির ডাক, ‘মাছ নেবেন মাছ। বড় বড় মাছ। জয়পুরহাটের নান্দাইল দীঘির মাছ। খুব স্বাদের মাছ।’ সনাতন ধমার্বলম্বীদের উৎসবের পঞ্জিকা অনুসারে রোববার ১ অগ্রহায়ন। দিনটি সনাতন ধমার্বলম্বীরা নবান্ন উৎসব হিসেবে উদ্?যাপন করেন। প্রতিবছর এই উৎসবকে ঘিরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী গ্রামে মাছের মেলা বসে। আর উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, বাকশন, রহবলসহ ১০-১২টি গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে উৎসবের আয়োজন হয়। প্রতি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়। নবান্নে মেলা থেকে কেনা বড় মাছ ও নতুন সবজি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথি-স্বজনদের। ইট বিছানো পথ ধরে এগিয়ে যেতেই গ্রামীণ পরিবেশ চোখে পড়ে। কঁাদা মাড়ানো পথ। একটু দূরেই বিপুল মানুষের সমাগম। সারি সারি মাছের পসরা সাজানো। মাছের দাম নিয়ে রীতিমতো হইচই। হচ্ছে চুলচেরা দরদাম। ভিড় ঠেলে একটু এগোতেই দেখা গেল, বিশাল আকারের দুটি বাঘাইড় ও দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। নাম মান্নান মিয়া। গাইবান্ধার বালাসীঘাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘আটটি মাছ নিয়ে এসেছিলাম। চারটি বাঘাইড় ও চারটি বোয়াল। প্রতিটি বোয়ালের ওজন হবে ১৩-১৪ কেজি, দাম কেজিপ্রতি হাজার টাকা। প্রতিটি বাঘাইড় মাছের ওজন ১০-১৫ কেজির মতো। ৯০০ টাকা কেজি। মেলায় নিজেদের মাছের ডালি নিয়ে এসেছেন অনেক বিক্রেতা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, মৃগেল, বিগ হেড কাপর্, গ্রাস কাপর্, কমন কাপর্ ও বø্যাক কাপর্ মাছ। ব্যাপক উৎসাহে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। মজার বিষয় হচ্ছে, যত দাম দিয়েই বেচাকেনা হোক না কেন, সবার মুখেই যেন বিজয়ের হাসি। বিশাল আকৃতির একটি গাঙচিতল মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকষের্ণর চেষ্টা করছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের রতন চন্দ্র মহন্ত। তিনি বলেন, এই গাঙচিতল মাছের ওজন ১৩ কেজি। ১৫ হাজার টাকা দাম। এটি ছাড়াও নানা প্রজাতির প্রায় ৩০০ কেজি মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে বসেছেন তিনি। মাছ বিক্রেতা শিবগঞ্জ উপজেলার সাতআনা চাকলমা গ্রামের শিহাব মিয়া বলেন, শতাধিক ব্যক্তি মাছ বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়েছেন উথলিতে। অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাছ কিনতে মেলায় এসেছেন পল্লী চিকিৎসক সজল কুমার দেবনাথ। শিবগঞ্জ উপজেলার আমতলীর বাজর এলাকায় থাকেন তিনি। জানালেন, অনেক দিন ধরে এখানে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে। এক দিনের এই মেলায় নিত্যনতুন জিনিস পাওয়া যায়। প্রধান আকষর্ণ মাছ। দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কেনার জন্য ক্রেতারা ভিড় জমান। এই নবান্ন উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বাড়ির আশপাশের পুকুরে সারাবছর ধরেই মাছ চাষ করেন। পুকুরের বড় বড় মাছ মেলায় বিক্রি করতে আনেন। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাকে চিন্তা করে মাছের দাম ঠিক করেন তারা। আর এলাকাবাসী তো আত্মীয়, তাদের কাছে এমনিতে দাম কম রাখেন বিক্রেতারা।