শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে ঘরে শিশুর জ্বর-সর্দি

পরীক্ষায় অনেকেরই করোনা পজিটিভ
লাইজুল ইসলাম
  ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

বিভিন্ন হাসপাতাল ও চেম্বারে আসা জ্বর-সর্দি আক্রান্ত শিশুদের করোনা টেস্ট করলেই ৫০ থেকে ৬০ ভাগের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে ঘরে শিশুদের জ্বর-সর্দি চিকিৎসকদেরও ভাবিয়ে তুলছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ অবস্থায় বাবা মায়ের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বাইরে থেকে গিয়েই বাচ্চাদের সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। কোচিং ও বাইরের কারো সংস্পর্শে না আনার পাশাপাশি আপাতত শিশুদের বাসার বাইরে বের না করাই ভালো। করোনা এখন বড়দের পাশাপাশি যেহেতু শিশুদেরও হচ্ছে তাই বাসার কেউ জ্বর-সর্দি আক্রান্ত হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শূন্য থেকে ২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কেয়ার নিতে হবে। বার বার ব্রেস্ট ফিড করাতে হবে। ২ থেকে ৭ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে কুসুম কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। জ্বর বাড়তে দেওয়া যাবে না। আর ৭ বছরের বেশি বয়সি শিশুদের গরম পানির পাশাপাশি রং চা খাওয়াতে হবে। এই কাজগুলোর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাতে জ্বর-সর্দি আক্রান্ত শিশুটির অবস্থা খারাপ না হয়। তবে প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে না গিয়ে অনলাইনে বা মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ আক্রান্ত না হলে হাসপাতালে গিয়ে আরেকজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হতে পারে।

সূত্র বলছে, ঢাকা শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ১১ জন শিশু করোনা পজিটিভ হয়ে ভর্তি আছেন। তাদের সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যও আছেন। তবে হয়তো কারো মা নেই বা বাবা নেই। কারো বাবা-দু'জনই সঙ্গে নেই, আছেন কাছের কোনো স্বজন। বাবা-মা করোনা পজিটিভ হওয়ায় আসতে পারেনি হাসপাতালে।

বহস্পতিবার সকালে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনে আকবর নামের বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলছিলেন, 'তার ভাই ও ভাবি করোনায় আক্রান্ত। তাদের একমাত্র শিশু সন্তানও করোনা আক্রান্ত। বাচ্চাটিকে দেখার জন্য হাসপাতালে আকবর ও তার স্ত্রী আছেন। প্রথমে জ্বর ছিল, এরপর সর্দি অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়। এর আগেই বাবা ও মায়ের করোনা পজিটিভ আসে। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ভেতরে আরও রোগী আছে। করোনা পজিটিভ বাচ্চাদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিক মতো।'

শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের সদ্য বিদায়ী পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ যায়যায়দিনকে বলেন, 'অনেক শিশু আছে যারা করোনায় আক্রান্ত। জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছে শিশুরা। তাদের সঙ্গে বাবা মায়েরাও হাসপাতাল ও চেম্বারে আসেন। বাচ্চাদের বেশির ভাগই টেস্ট করালে পজিটিভ আসছে। বাবা-মায়ের থেকেই বাচ্চারা করোনা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। স্কুলতো এখন বন্ধ থাকবে তাই বাইরে আর বাচ্চাদের বের হতে দেওয়া যাবে না। এখন সময় এসেছে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিশুদের এক্সট্রা কেয়ার নেয়ার।'

ডা. সফি আরও বলেন, 'গলায়-মাথা-শরীর ব্যথা পাশাপাশি জ্বর-সর্দি-কাশি থাকলে অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে। যেসব বাচ্চাকে চেম্বারে পেয়েছি তাদের বেশির ভাগই বাবা-মায়ের কাছ থেকে আক্রান্ত। এখন তো ঘরে ঘরে শিশুদের জ্বর-সর্দি। তবে কিছু বাচ্চার সাধারণ ফ্লু হচ্ছে। তাই জ্বর-সর্দি হলে বাবা মাকে বাচ্চার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। মাস্ক পরে ঘরের ভেতর চলাফেরা করতে হবে। বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য নতুন কোনো নিয়ম নেই। সিম্পটম দেখে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'একেবারে প্রথমেই হাসপাতালে না এসে বাসায় বসে অনলাইনে চিকিৎসক দেখাতে হবে। টেস্ট করতে হবে। যদি টেস্টে পজিটিভ আসে তাহলে হাসপাতালে বা চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হবে। নইলে বাসায় থাকাই এখন ভালো। কারণ অনেকেই আক্রান্ত কিন্তু মাস্ক না পরিয়ে বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে আসে। তখন আরও বাচ্চা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।'

শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার যায়যায়দিনকে বলেন, 'এখন প্রচুর রোগী জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা চলছে সিম্পটম অনুযায়ী। কিন্তু এভাবে যদি বাড়তে থাকে তবে সামনে খুব খারাপ সময় আসতে পারে! কপাল ভালো এবারের ভ্যারিয়েন্টে এখন পর্যন্ত সিভিয়ারিটি কম। কিন্তু সামনে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বাচ্চাদের নিয়ে আপাতত বাবা মায়ের নতুন করে ভাবতে হবে। কি করা যাবে, কি করা যাবে না- এটা আগে থেকেই চিন্তা করে নিতে হবে। বাচ্চাদের আপাতত বাসার বাইরে একদমই নেওয়া যাবে না। জনবহুল এলাকা বা জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। যাতে বহু মানুষের সংস্পর্শে না আশে। বাইরে নিলেও মাস্ক পরিয়ে নিতে হবে। মাঝে মধ্যে বের করলেও ফাঁকা স্থানে নিয়ে যেতে হবে।'

তিনি বলেন, 'সব বাচ্চাকেই আইসোলেশন করতে হবে। বাবা-মা-স্বজন যেই থাকুক সব সময় টাইট করে মাস্ক পরা থাকতে হবে। দুই বছরের কম বাচ্চাকে মা বার বার ব্রেস্ট ফিড করবে। এর থেকে বড় ওষুধ নাই। একটু বড় বাচ্চাকে ডাক্তারের পরামর্শে রোগ বুঝে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। এভাবেই আপাতত সবাইকে খারাপ সময় পার করতে হবে।'

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বাচ্চারা এবার করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন মরণঘাতী কি না এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু আক্রান্তের ক্ষমতা এই ভাইরাসের বেশি তা নিয়ে কোথাও কোনো মতভেদ নেই। তাই সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে