বারবার আঘাতেও থামেননি কবি ও আবৃত্তিকাররা :প্রধানমন্ত্রী

কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক না বলা কথা বলা হয়। অনেক সংগ্রামে পথ দেখানো হয়। একজন রাজনীতিবিদ বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেন। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চার আবেদন বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশি

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কবিতা, গান, নাটক আর সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসবে মানুষ যেভাবে উদ্বুদ্ধ হয়, তা আর কিছুতে হয় না। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যখন দেশে রাজনীতি 'নিষিদ্ধ' ছিল, তখনও কবি ও আবৃত্তিকাররা প্রতিবাদ করেছেন। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে 'বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০-২০২২'-এর উদ্বোধন এবং 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২' বিতরণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড করা যাচ্ছিল না, তখন আমাদের কবিতার মধ্য দিয়েই প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়। একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি, সেটাতো আমরা নিজেরাই জানি। বারবার আঘাত এসেছে, কিন্তু বাঙালি কখনো বসে থাকেনি, প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে।' 'নীল দর্পণ' নাটক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছিল উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এক একজন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার, আমাদেরকে যা কিছু দিয়ে গেছেন এগুলো আমাদের সম্পদ।' তিনি বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি বলব যে এ দেশে আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান রয়েছে এ দেশের কবিদের এবং আবৃত্তিকারদের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সকলের প্রতি। সে সময় অনেকেই যে যে যেভাবে পেরেছেন, লিখেছেন, নাটক করেছেন, সাহিত্য রচনা করেছেন, বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে। কিন্তু থেমে থাকেননি কেউ।' কবিতার অমোঘ শক্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যখন আন্দোলন শুরু করলাম, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, তখনও কত নাটক, কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধা-বিপত্তিও এসেছে। তখনকার কবিতা উৎসব অনেক বাধার মধ্য দিয়েই করতে হতো।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি নিজেও এসব কবিতা পাঠের আসর বা উৎসবে যেতাম। কখনো দূরে বসে বা গাড়িতে বসেও এসব উপভোগ করেছি।' তিনি বলেন, 'এই কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক না বলা কথা বলা হয়। অনেক সংগ্রামে পথ দেখানো হয়। একজন রাজনীতিবিদ বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেন। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চার আবেদন বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশি। 'আমি যে কথা বললে একটি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার থেকে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো যায়।' বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের পাঁচ দিনব্যাপী এই কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২' বিতরণ করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আবৃত্তিসহ শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ৬৬ জন কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এ পদক পান। এর মধ্যে ১৬ গুণীজনকে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর সম্মাননা। মরণোত্তর স্মারকে ভূষিত ১৬ গুণীজনের মধ্যে রয়েছেন- ওয়াহিদুল হক, নাজিম মাহমুদ, কামাল লোহানী, নিখিল সেন, অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী, মৃণাল সরকার, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, তারিক সালাহউদ্দীন মাহমুদ, খান জিয়াউল হক, এস এম মহসিন, কাজী আরিফ, ইশরাত নিশাত, রণজিত রক্ষিত, কামরুল হাসান মঞ্জু এবং খালেদ খান। অপর ৫০ গুণীজন হলেন- রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ম. হামিদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, ডক্টর মুহাম্মদ সামাদ, বিপস্নব বালা, গোলাম কুদ্দুছ, লিয়াকত আলী লাকী, ডক্টর আব্দুল মালেক, হারুন-অর-রশিদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, সাগর লোহানী, কেয়া চৌধুরী, নিমা রহমান, প্রজ্ঞা লাবনী, লায়লা আফরোজ, ডালিয়া আহমেদ, ইস্তেকবাল হোসেন, বেলায়েত হোসেন, রূপা চক্রবর্তী, মোহাম্মদ কামাল, মীর বরকত, হাসান আরিফ, গোলাম সারোয়ার, এনামুল হক বাবু, শিমুল মুস্তফা, মোকাদ্দেস বাবুল, আজমল হোসেন লাবু, আবু সুফিয়ান কুশল, আলম আরা জুঁই, সমরজিৎ দাস টুটুল, রফিকুল ইসলাম, রেজীনা ওয়ালী লীনা, ইকবাল খোরশেদ, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাহিদুল ইসলাম, কাজী মাহতাব সুমন, রাশেদ হাসান, আজহারুল হক আজাদ, মীর মাসরুর জামান রনি, মাসুদুজ্জামান, আহসান উলস্নাহ তমাল, সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু, অনন্যা লাবনী পুতুল, শিরিন ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ঝর্না সরকার এবং লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দেশে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ বিভিন্ন আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, দেশবরেণ্য শিল্পী-সাহিত্যিকেরা উপস্থিত ছিলেন।