শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার চেয়ে অসংক্রামক রোগে মৃতু্য বেশি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছে তার থেকে বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা গেছে। যা করোনা রোগীর চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। তাই করোনার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের প্রতিও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ২০৪০ সালে অসংক্রামক রোগে মৃতু্য বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনের প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে এ সব কথা বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আজ শেষ হবে এই সম্মেলন। ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, 'কোভিডে সারা বিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃতু্য, অসংক্রামক কোনো কোনো রোগে মৃতু্য তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণেরও বেশি। শুধু ধূমপানজনিত কারণেই প্রতিদিন গড়ে মৃতু্য হচ্ছে ৩৫০ জনের। ক্যানসার, টিভি, হার্ট ডিজিজ সবই অসংক্রামক রোগ এবং সবগুলোর কারণে যে মৃতু্যর হার, প্রতিটির মৃতু্যর হার কোভিডে মৃতু্যর থেকে পাঁচ গুণ বেশি। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রামক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি।'

বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন (৮৪ লাখ) মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে সংখ্যা বাড়তে পারে। তাদের শুধু ইনসুলিনের পেছনেই বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্য বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি নেই দাবি করে স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক বলেন, করোনা টিকার জন্য এবার সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি তহবিল আছে, সেখান থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে আমরা যদি হিসাব করি, তাহলে ১০ ভাগের কাছাকাছি হবে।

শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, 'চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬৭ দশমিক ৫ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, তাদের জন্য সরকার প্রতি মাসে হেলথ অ্যালাউন্স দিয়ে থাকে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এটির পরিমাণও ছয় হাজার কোটি টাকা। এটি কিন্তু হিসাবে আনা হয় না। সবকিছু আনলে হয়তো সরকারের অংশগ্রহণ আরও বেশি হতো। থোক বরাদ্দ চলমান অর্থবছরে কোভিডের কারণে যা খরচ করেছে সেটি ধরলে সরকারের অংশগ্রহণ অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য নেই। যা বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, আমরা সব সময় সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে পারি না। সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি তো নেই। আমরা অনেক বিষয়ে অগ্রগামী চিন্তা করছি। কিন্তু সেই চিন্তাগুলো সমন্বিতভাবে পূরণ করতে পারলে অসংক্রামক রোগ থাকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পেতে পারি।'

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, বাংলাদেশে এনসিডি একটি নতুন ও চলমান বোঝা। ডায়বেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসারের রোগী উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। সরকার অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যানসার হাসপাতাল হচ্ছে। হৃদ্‌?রোগের চিকিৎসায় গত দুই দশকে দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নারে পাঁচটি ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত হতে কাজ করছে সরকার।

মেয়র আরও বলেন, 'সিটি করপোরেশন হিসেবে নগর স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আমাদের, এনসিডির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা সিটিতে পার্ক ও ফুটপাত স্থাপন করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমরা আমাদের মাস্টারপস্ন্যান অনুসারে কাজ করছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় দুটি হাসপাতাল আছে, সেগুলোর উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে।'

প্রথম পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথের (আইএসইউএইচ) সভাপতি অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (বাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে