জমজমাট তারাকান্দির সবজি বাজার

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
ভোর ছয়টা। শীতের সকাল। ঘন কুয়াশার কারণে চারদিক তখনো অন্ধকার। তারও আগে থেকে ক্ষেতের ফুলকপি আহরণে ব্যস্ত কৃষক। কৃষক গোলাপ মিয়া জানালেন, সেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর থেকেই তারাকান্দি বাজারের সবজির হাট বসে। তার আগেই সবজি তুলে পরিস্কার করে হাটে নিতে হয়। তাই তাদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয় কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি বাজারের হাটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় প্রায় কোটি টাকার সবজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই সবজি চলে যাচ্ছে বিদেশসহ রাজধানী ও আশপাশের বাজারে। তারাকান্দির এই সবজির হাটটির সুনাম দেশব্যাপী। এ হাটে সবজি কেনাবেচা করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। মহাসড়কের পাশে হওয়ার কারণেই হাটটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-নান্দাইল মহাসড়কের পাশেই পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি এলাকায় সবজির বড় হাট বসে। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত সবজি কেনাবেচায় সরগরম থাকে হাটটি। জেলার বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত নানা জাতের সবজির দেখা মিলে এ হাটে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ হাটে বিক্রির জন্য আসেন। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পাইকাররাও খুব সহজেই সবজি পরিবহণ করে ঢাকায় নিতে পারছেন। হাটের সবজি বিক্রেতা বাদল মিয়া জানান, তিনি ৯০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় তিন লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। সরেজমিন হাটে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে শুধু সবজি আর সবজি। এ যেন সবজি চাষীদের মিলনমেলা। এ হাট থেকে শত শত টন সবজি প্রতিদিন ট্রাকে করে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুমন মিয়া জানান, এ হাটে তোলা সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, বরবটি, লাউ, বেগুন, ওলকপি, টমেটো, লাউশাক, লালশাক, শশা, পালংশাক, ধনেপাতা। এছাড়াও এই হাটে এমন কোনো সবজি নেই যে পাওয়া যায় না। এই বাজার থেকে টাটকা শাকসবজি নিয়ে বিক্রি করেন। এতে তার ভালো লাভ হয়। হাটের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুম জানান, স্থানীয় এই সবজি টাটকা ও তরতাজা হওয়ায় বাজারে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য হাটের তুলনায় এ হাটে দরদামও সুলভ এবং বিক্রেতারা আন্তরিকতাপূর্ণ। \হহাটের আড়তদার জাকির হোসেন জানান, এ হাটে গাজীপুর, ময়মনসিংহ নান্দাইল, নরসিংদীসহ আশপাশের জেলা থেকে ভালোমানের সবজি আসে। তাছাড়া হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান। প্রতিদিন এ হাটে প্রায় ১ কোটি টাকার সবজি কেনাবেচা হয়। ঢাকার কারওরানবাজার থেকে হাটে আসা কাঁচা মাল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, আশপাশের অনেক হাটের তুলনায় নিমসার বাজারে প্রতি মণ সবজি ১০০-২০০ টাকা কমে পাওয়া যায়। আর তরতাজা সবজি মেলে এ হাটে। শুধু কারওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা নন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নান্দাইল, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে এ হাট এখন বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি আরও বলেন, তুলনামূলক সস্তা এবং তাজা সবজি পাওয়ার পাশাপাশি এ হাটের আরও সুবিধাজনক দিক হচ্ছে সড়ক পথে সবজি বিভিন্ন স্থানে নেওয়া যায়। এখানে চাঁদার হয়রানি নেই। ইজারাদার আব্দুল লতিফ বেপারী জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় শতাধিক বেপারী আসেন তারাকান্দি বাজারে। এখানে কোনো ঝামেলা নাই। মালের দাম অনেক কম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, 'পাকুন্দিয়া উপজেলা ও পাশের এলাকাগুলোতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রচুর সবজি চাষ হয়। আমরা কৃষকদের নতুন নতুন সবজি, ফলমুল চাষ করতে সহায়তা করি। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করায় কৃষকরা সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী জানান, উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই বাজারটি জমজমাট হয় প্রতিদিন। এ হাটে সবজি কেনাবেচা করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।