একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি দখল চায় আওয়ামী লীগ

পাবনা-৫ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া)

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ইমরান হোসেন ইমন ধুনট (বগুড়া) থেকে
নিবার্চনী আমেজে ব্যাপক উত্তেজনা আর কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে বগুড়া-৫ আসন ঘিরে। বড় দুই দলের মনোনয়ন লড়াইয়ে কে পাচ্ছেন নৌকা অথবা ধানের শীষ তা নিয়ে সবর্স্তরে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফিরছে নিবার্চনী আলাপ। শহর ও গ্রামাঞ্চলের চা স্টলগুলো এখন নিবার্চনী টকশো’তে পরিণত হয়েছে। তকের্-বিতকের্ চায়ের কাপে ধেঁায়া তুলছে বিভিন্ন দল ও মতের সমথর্করা। অনেকে দশর্ক ও শ্রোতা হয়ে তা উপভোগ করছেন। শেরপুর ও ধুনট উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৫ আসন। এক সময় বিএনপির ঘঁাটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বিনা ভোটে আবারও আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এ আসনটি। তাই পরপর দুইবার এ আসনটি দখলে থাকায় বিএনপির ঘঁাটিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐগুলোই এখন বিএনপির ঘঁাটিতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দঁাড়িয়েছে। তাই এ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ আবারও বিজয়ী হবে বলে নেতাকমীর্রা আশাবাদী। অন্যদিকে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি খ্যাত বগুড়া জেলার প্রায় সবকটি আসনই এক সময় ছিল বিএনপির ঘঁাটি। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বগুড়া-১ ও বগুড়া-৫ এই দুইটি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। তন্মধ্যে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনটি ছিল অতি গুরুত্বপণর্। দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় আবারও এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকে। তাই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এ আসনটি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। অপরদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি রাজনৈতিক নিবার্চনী মাঠে রয়েছে জাতীয়পাটির্ ও জামায়াত। নিবার্চন অফিস সূত্রে জানা যায়, ধুনট উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ৫৪৩ জন ও মহিলা ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ জন। এ ছাড়া শেরপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৩ হাজার ৭১৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৩ জন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীের্দর মধ্যে যারা দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেনÑ আওয়ামী লীগের বতর্মান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবর রহমান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা, শেরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক এমএ হান্নান ও শেরপুর শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা জামান হিমিকা। বিএনপির দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনÑ বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টামÐলীর সদস্য জানে আলম খোকা, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম শফিউজ্জামান খোকন ও মাহবুবুর রহমান হারেজ। এ ছাড়া জাতীয় পাটির্ থেকে দলের নিবার্হী কমিটির সদস্য সাবেক জজ অ্যাডভোকেট তাজ মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহজাহান আলীও দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন না থাকলেও শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা দবিবর রহমানের নামও স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীের্দর অবস্থান নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপির মনোনীত প্রাথীর্ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জানে আলম খোকাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন ধুনটের সন্তান সাবেক পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবর রহমান। নিবাির্চত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন তিনি। পরপর দু’বার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হওয়ায় ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় অনেক ব্রিজ, কালভাটর্, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেক্টরে অভূতপূবর্ উন্নয়ন করেছেন তিনি। তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতেও তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এ কারণে বিগত দিনের চেয়ে বতর্মানে ধুনট-শেরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভীত আরও মজবুত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাই তিনি আশাবাদী এবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অপর সম্ভাব্য প্রাথীর্ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু। তিনিও ধুনট ও শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠনিক করতে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি গুরুত্বপূণর্ অবদান রেখেছেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে সংসদ নিবার্চনের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে শেরপুর উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে অংশ নেন। কিন্তু জামায়াতের প্রাথীর্ দবিবর রহমানের কাছে ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। এরপর থেকেই তিনি নিবার্চনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ছাড়া ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিকও নিবার্চনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। এলাকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐ জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে গণসংযোগ করছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রাথীর্ ধুনটের সন্তান বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসী রুপা। তিনিও আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐ জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে গণসংযোগ করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রাথীের্দর অবস্থান নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে সংস্কারপন্থি হওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পান বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক জানে আলম খোকা। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকেই তিনি এলাকায় নিবার্চনী মাঠে সক্রীয় রয়েছেন। দলের নেতাকমীের্দর আগলে রেখে তিনি দলকে সুসংগঠিত করছেন। তাই দল তাকেই মনোনয়ন দিবেন বলে তিনি আশাবাদী। অপর প্রাথীর্ হিসেবে বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ধুনট উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক তৌহিদুল আলম মামুনও নিবার্চনী মাঠে সক্রীয় রয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রাথীের্ক বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হয়ে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিবাির্চত হয়েছেন। তিনি এবার সংসদ নিবার্চনের জন্য মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কমর্কাÐ করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। এ ছাড়া এক সময়কার সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও বিএনপির তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বতর্মানে দলে ভিড়েছেন। তিনিও এবার দলের শক্তিশালী প্রাথীর্। তিনিও এলাকায় তার পুরনো নিবার্চনী ইমেজ তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি আশাবাদী, এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে বিএনপির হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। এদিকে সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধুনট উপজেলায় ৮৭টি ভোটকেন্দ্রের ৪১৯টি বুথে এবং শেরপুর উপজেলার ৯২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ধুনট উপজেলা নিবার্হী কমর্কতার্ রাজিয়া সুলতানা বলেন, আসন্ন সংসদ নিবার্চন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতিসম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। নিবার্চনের আগমুহ‚তের্ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।