বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি

মামলা-হামলা উপেক্ষা করে চলছে কার্যক্রম

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলে ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা এ জেলায় রাজনৈতিক সহাবস্থানের নজির নেই বললেই চলে। গেল শাসক দল আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচন ও দলীয় সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিএনপি। তবে বড় এ দুই দলের মধ্যেই লবিং-গ্রম্নপিং বিভক্তি রয়েছে প্রকাশ্যে। এ জেলার সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি তারেক মাহমুদ
নতুনধারা
  ১৫ মে ২০২২, ০০:০০

ঝিনাইদহ-৪ আসন এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। মহেশপুর-কোটচাঁদপুর আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টার ৪ বার, কালীগঞ্জ আসন থেকে এম শহিদুজ্জামান বেল্টু ৪ বার, ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু আসন থেকে মসিউর রহমান ৪ বার এবং শৈলকুপা আসন থেকে আব্দুল ওহাব ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের পরাজিত করে আওয়ামী লীগের ৪ প্রার্থী এসব আসনে জয়লাভ করেন। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন দলের দমন-পীড়ন মামলা হামলাসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে চলছে জেলা বিএনপির কার্যক্রম।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। ২ বছর মেয়াদের কমিটি ৬ বছর পার হলেও পুনর্গঠন করা হয়নি। গত তিন বছর হলো আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে চলছে দলের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে জেলার ৬ উপজেলার ১২ ইউনিটের মধ্যে কালীগঞ্জ বাদে বাকি ৫ উপজেলার ১০ ইউনিটের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৮ মে দলের জেলা কাউন্সিলের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এমনকি কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়। গত ১৬ এপ্রিল ঝিনাইদহে শৈলকুপা উপজেলার কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় নেতাকর্মী। এসময় কমপক্ষে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়। দলে দ্বন্দ্বের ফলে সব উপজেলা থেকে একাধিক অভিযোগ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

যদিও দলের নেতারা বলছেন, বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে-তা কোন্দল বা বিভেদ নয়। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি এখন সুসংগঠিত একটি দল। দলের ঘোষিত যে কোনো আন্দোলন সফল করতে প্রস্তুত জেলা

বিএনপি। সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সরকার ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি না মানলে দল নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি আন্দোলনের রূপরেখা দেবে। আন্দোলন সফল করতে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের আন্দোলন এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের সঙ্গে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ এখন পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এবং পুলিশ নির্ভরশীল একটি দল। জনগণের টাকায় পুলিশের বেতন দেওয়া হয় জানমালেরর নিরাপত্তার জন্য। সেই পুলিশকে জনগণের বিপক্ষে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানাভাবে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা একটি কর্মসূচি ঘোষণা করলে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের তাড়া করে। মামলা দিয়ে পুলিশ হয়রানি করে। গত ১৩ বছরের শাসনামলে শুধু ঝিনাইদহে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১৩ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে প্রায় ৯০০ মামলা করা হয়েছে। তারপরও আমরা মাঠ ছাড়িনি। বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো হাজার হাজার নেতাকর্মী হাজির হয়।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি এ সরকারের অধীন স্থানীয় বা জাতীয় কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে না। আগামী ১৫ জুন ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। তাছাড়া ইভিএমে কোনো নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না। কারণ হিসেবে বলেন, ইভিএম সরকারের কারচুপির বাক্স। সরকারর অধীন নির্বাচন নয়, আমরা নিরপেক্ষ কমিশনের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। প্রয়োজন হলে দাবি আদায়ের যে কোনো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

এমএ মজিদ আরও বলেন, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যখনই কোনো নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, তখনই দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রার্থী ও তার পরিবারের ওপর চলে পুলিশ ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা মামলা আর নির্যাতন। হামলা মামলা মোকাবিলা করেই আমারা নির্বাচনের মাঠে থাকি।

দলের লবিং-গ্রম্নপিং সম্পর্কে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য সংগ্রাম কমিটির জেলা আহ্বায়ক মজিদ বলেন, দলের সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে কিছুটা গ্রপিং ছিল। যে কারণে নেতাকর্মীর মধ্যেও গ্রম্নপিং ছিল। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর বিগত এক বছরে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে জেলার ১২ ইউনিটের মধ্যে ১০টিতে উপজেলা ও পৌর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম মশিউর রহমান। বর্তমানে সব ইউনিটের সংগঠন শক্তিশালী হিসেবে দলের সব কর্মসূচি পালন করছে। আগামীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে। দলের মধ্যে সামান্যতম নেতৃত্বের কিছু প্রতিযোগিতা থাকলেও তা কোন্দল বা বিভক্তি নয় বলে যোগ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ মজিদ।

গত সংসদ নির্বচনে দিনের ভোট রাতে হওয়ায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তারপর বিএনপি প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীর ঠেকাতে একের পর এক মামলা ও হামলা করে কোণঠাসা করে রাখে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবারো জেলার চারটি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হবেন বলে দাবি করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু জানান, ঝিনাইদহ সব সময়ই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বিএনপি একটি বড় দল। দলের মধ্যে বিভক্তি থাকতেই পারে। তবে জাতীয় ইসু্যতে নেতাকর্মী সবাই এক। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে প্রস্তুত জেলার নেতাকর্মী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে