বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়
ধর্মীয় অনুষ্ঠান বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ। বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই পূর্ণিমায় মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে খ্যাত।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। ৫৮৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন। আবার ৫৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের একই দিনে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন তিনি। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়।
বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধরা বুদ্ধপূজাসহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা এবং নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তারা বুদ্ধানুস্মৃতি ও সঙ্ঘানুস্মৃতি ভাবনা করেন। পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিবিধ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়
অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। বৌদ্ধবিহারগুলোয় বুদ্ধের মহাজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনাসহ ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়।
দিনভর বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দিনটি পালন করে থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত বছর এই উৎসবটি অনাড়ম্বরভাবে উদযাপন করা হয়। শুধু বুদ্ধপূজা, মহাসঙ্ঘদানের মতো আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এ বছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে বৌদ্ধ পূর্ণিমার সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা উদ্যাপিত হবে।
দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। আজ সরকারি ছুটি।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফোরাম, বুড্ডিস্ট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রভাত ফেরি, বুদ্ধ পূজা, শোভাযাত্রা, সেমিনার, প্রদীপ প্রজ্বলন এবং সমবেত প্রার্থনা।
বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায়, পূর্বজন্মে বোধিস্বত্ব সব পারমি পূরণ করে সন্তোষ কুমার নামে যখন স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, তখন দেবগণ তাকে জগতের মুক্তি এবং দেবতা ও মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন। দেবতাদের অনুরোধে বোধিস্বত্ব সর্বদিক বিবেচনাপূর্বক এক আষাঢ়ি পূর্ণিমায় স্বপ্নযোগে মাতৃকুক্ষিতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম লাভ করেন। তার জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। তার নিকট জাতি, শ্রেণি ও গোত্রের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। তিনি মানুষকে মানুষ এবং প্রাণীকে প্রাণী রূপেই জানতেন এবং এর প্রাণসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আছে তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন, 'সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা' জগতের সব প্রাণী সুখী হোক।