গ্যাস সংকটে যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২২, ০০:০০

বাদশা ভূঁইয়া, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)
জামালপুরের সরিষাবাড়ী তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের একমাত্র দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যমুনা সার কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) এমনটাই জানিয়েছেন। কারখানার একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৭শ' মেট্রিক টন। গ্যাসের চাপ কম থাকায় তা ১৩২৬ মেট্রিক টনে নেমে আসে। চলতি মাসে ৪১ হাজার মেট্রিক টান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছেনা যমুনা সার কারখানা। কারখানা চালাতে হলে চাহিদামাফিক চাপে ও পরিমাণে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ অতি জরুরি। চাহিদামাফিক গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছেনা যমুনা। বিষয়টি বিসিআইসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি অবহিত করেছেন (জেএফসিএল) কারখানা কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ২৭ মার্চ যমুনা সার কারখানার শর্ট শাট-ডাউন শুরু হয়। শর্ট শাট-ডাউন শেষে গত ২ মে উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর ৫ দিন পর ফের যান্ত্রিক ত্রম্নটি দেখা দেয়। অ্যামোনিয়া পস্নান্টের ২নং বিএফডবিস্নউ প্রি-হিটারের এসি-ই-০৫এ/বি এর ক্যাপ ফ্লাঞ্জের ওয়েলডিং ফেল করে। এতে ব্যাপক হারে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। এ কারণে কারখানার নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো অ্যামোনিয়া পস্নান্ট বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে মেরামত কাজ শুরু করা হয়। গত ১১ মে মেরামত কাজ শেষ হয়। পরদিন ১২ মে ওই লিকেজ টেস্ট করে সঠিক পাওয়া যায়। উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন গ্যাস। কিন্তু কারখানায় দেখা দিল গ্যাস সংকট। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে বেশ কয়েকটি ধাপে নির্ধারিত চাপে ও পরিমাণে গ্যাসের প্রয়োজন হয়। প্রথম ধাপে ২৮ এমএমসিএফ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৩ এমএমসিএফ, তৃতীয় ধাপে ৩৫ এমএমসিএফ, চতুর্থ ধাপে ৩৮ এমএমসিএফ ও পঞ্চম ধাপে ৪২ এমএমসিএফ গ্যাসের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর সুষ্ঠু ও নিরাপদে কারখানা চালাতে সার্বক্ষণিকভাবে ২৫ কেজি চাপে ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন। গত ১২ মে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে কারখানার চাহিদামাফিক চাপে ও পরিমাণে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন হয়। তবে গ্যাসের চাপ কোনোভাবেই স্থিতিশীল থাকছে না। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ওইদিন সকাল ৭টায় গ্যাসের চাপ ছিল ১৬ দশমিক ৯০ কেজি। বিকাল ৬টায় তা ৬ দশমিক ৩০ কেজিতে নেমে আসে। এভাবে দ্রম্নত গ্যাসের চাপ কমতে থাকায় কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় আসে কর্তৃপক্ষের। পরে প্রাইমারি রিফরমারের ১৬০টি বার্নারের ১৪০টিই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। যমুনা সারকারখানা একটি অত্যাধুনিক ভারী শিল্প-কারখানা। এ কারখানার লোড ঘন ঘন উঠানামা করা হলে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ব্যাপকহারে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ওই সূত্রটি দাবি করে। এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আব্দুল হালিম বলেন, কারখানাটি সুষ্ঠু ও নিরাপদে চালু রাখতে হলে চাহিদামাফিক চাপে ও পরিমাণে স্থিতিশীলভাবে সার্বক্ষণিক গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন। উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্যান্য ধাপ সম্পন্ন করতে হলে ২৫ কেজি চাপে দৈনিক ৪৫.০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।