শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

'দেশে অপুষ্টিতে ভুগছে ২৮ শতাংশ শিশু'

গুলশানে দারিদ্র্য কম বেশি চর রাজিবপুরে
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ মে ২০২২, ০০:০০

শিশুদের অপুষ্টি কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ইতিহাসে দ্রম্নততম। খাদ্য উৎপাদন উন্নতকরণ ও বণ্টন ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিশুদের খর্বাকৃতির হার ১৪ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। খর্বাকৃতির হার ২০১৩ সালে ছিল ৪২ শতাংশ, ২০১৯ সালে তা কমে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) কার্নিভাল হলে 'বাংলাদেশের অপুষ্টি মানচিত্র ২০১৯' প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ডক্টর শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনি পিয়ার্সি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বিবিএস'র প্রভার্টি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন ম্যাপিংসের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের পুষ্টি বিষয়ক অনেক কাজ হাতে নেওয়া হয়। এগুলো অনেকাংশেই দরিদ্রবান্ধব। দেশে দৃশ্যমান পুষ্টি-সংবেদনশীল কার্যক্রমের কারণে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা কমেছে। আয় বৃদ্ধি, পরিবার ছোট রাখা, দুটি সন্তান জন্মের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সময়ের ব্যবধান রাখা, পিতামাতার বিশেষত নারীদের শিক্ষা এবং বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের কারণেই এই সফলতা এসেছে।

সব ধরনের অপুষ্টি দূর করে উত্তম পুষ্টিমান উৎসাহিত করার গুরুত্ব টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন, ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রচার ভূমিকা রাখে। গত ২০ বছরে খর্বাকৃতির শিকার ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে।

২০২০ সালের বিশ্ব পুষ্টি প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ একই গতিতে চলছে বলে ধরে নিলে দেখা যায়, ২০২৫ সালের ১০টি বৈশ্বিক পুষ্টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথাযথ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে। শিশুদের অপুষ্টির অবস্থা নির্দেশে তিনটি পরিমাপক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো হলো- উচ্চতা, ওজন ও বয়স। ৬০ মাসের কম বয়সি শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

গুলশানে দারিদ্র্য কম, বেশি চর রাজিবপুরে : এদিকে, দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে, মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস কুড়িগ্রামের চর রাজিব উপজেলায়, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালের দারিদ্র্যের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বের করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) এসব তথ্য জানিয়েছে।

রোববার বিআইসিসি কার্নিভাল হলে 'প্রভার্টি অ্যান্ড আন্ডার নিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক' শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্যও প্রকাশ করা হয়। বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে।

সেমিনারে দেশের দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। এতে স্থানীয় সরকার পরিচালনার জন্য সারাদেশকে ৫৭৭টি উপজেলায় (মেট্রোপলিটন থানাসহ) বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে এসব ডাটা ব্যবহার করে দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।

সেমিনারে জানানো হয়, বিভাগের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে অবস্থানকারী উপজেলার সংখ্যায় বৈষম্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। অতি নিম্ন দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোনো উপজেলা নেই। রংপুর বিভাগে অতি নিম্ন দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে অবস্থানকারী উপজেলা শুধু একটি। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে অতি উচ্চ দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে অবস্থানকারী উপজেলা মাত্র একটি।

ঢাকা বিভাগে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক ৭৭টি উপজেলা-মেট্রো থানা রয়েছে অতি নিম্ন দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে। একই সঙ্গে এ বিভাগে ১২টি উপজেলা রয়েছে অতি উচ্চ দারিদ্র্যের হার গ্রম্নপে।

বরিশাল বিভাগে দারিদ্রের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই বিভাগের ভোলার দৌলতখান উপজেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১২ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় দারিদ্র্যের হার বেশি ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই বিভাগে সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার চট্টগ্রাম সদরে, মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার বান্দরবানের থানচি উপজেলায়, ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ১৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার গুলশানে, মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। মিঠামইন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি, ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনা বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এই বিভাগের চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা দারিদ্র্যের হার সবেচেয়ে কম, ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সবেচেয়ে বেশি মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলায়, ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ।

এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ময়মনসিংহের ভালুকায় দারিদ্র্যের হার সবেচেয়ে কম, ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এই বিভাগে সবেচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়, ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এই বিভাগে কম দারিদ্র্যের হার রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলায়, মাত্র ৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি নওগাঁর পোরশায়, ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই ব্‌িভাগে সবচেয়ে বেশি দরিদ্রপ্রবণ এলাকা কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায়, ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

সিলেটে গড় দারিদ্রের হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এই বিভাগে কম দরিদ্রপ্রবণ উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথ, ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। বেশি দারিদ্র্যের হার সুনামগঞ্জের শালস্না উপজেলা, ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশে গড় দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

সেমিনারে বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলা ও মেট্রোপলিটন ভিত্তিক দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বের করলাম। এটা দেরিতে করতে হয়েছে নানা কারণে। তবে সামনে আরও দ্রম্নত সময়ে উপজেলা ভিত্তিক দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বের করব। তবে দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বের করায় অনেক সংসদ সদস্য খুশি নন। দেশে গড় দারিদ্র্যের হার বেশি দেখানোর জন্য অনেক সংসদ সদস্য আমার কাছে আসেন, যাতে করে বেশি বেশি সুবিধা ভোগ করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে