ভাড়া বাড়িতে ডিএমপির ১৫ থানার কার্যক্রম

প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২২, ০০:০০

গাফফার খান চৌধুরী
ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ১৫টি থানার কার্যক্রম চলছে ভাড়া বাড়িতে। বাড়ি ভাড়া বাবদ ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। অথচ ১৫টি থানা এলাকাতেই সরকারি খাস জমি আছে। ওইসব খাস জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছেন। সমন্বয়হীনতার কারণে উদ্ধার হচ্ছে না বেহাত হওয়া জমি। জমি উদ্ধার করে বা জমি কিনে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে থানার কার্যক্রম আরও গতিশীল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। আর ভাড়া বাবদ ব্যয় হওয়া টাকা পুলিশের অন্য কোনো উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের জন্য বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ায় চলা ঢাকার ১৫টি থানার মধ্যে বংশাল থানার কার্যক্রম চলছে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের ফজলুল করিম কমিউনিটি সেন্টারে। আর মুগদা কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে চলছে মুগদা থানার কার্যক্রম। আর পুরোপুরি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছে বাকি ১৩টি থানার কার্যক্রম। যার মধ্যে পান্থপথের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১১/৮ নম্বর এ এম রেসিডেন্সিশিয়ালের দুই নম্বর ছয়তলা বাড়িতে চলছে কলাবাগান থানার কার্যক্রম। রমনা থানার কার্যক্রম চলছে জাতীয় রাজস্ব ভবনের সামনের কাকরাইলের একটি বহুতল বাড়িতে। দক্ষিণ কামরাঙ্গীরচর থানাধীন আশরাফাবাদ এলাকার একটি আবাসিক বাড়িতে চলছে কামরাঙ্গীরচর থানার কার্যক্রম। মোহাম্মদপুর থানাধীন রিং রোডের ১১০৫/এ নম্বর আবাসিক ভবনে চলছে আদাবর থানার কার্যক্রম। মিরপুর এক নম্বর সেকশনের এক নম্বর সড়কের বি-বস্নকের ২৯ নম্বর আবাসিক বহুতল বাড়িতে চলছে শাহ আলী থানার কার্যক্রম। উত্তরখানের ১৯৫ নম্বর বাড়িতে চলছে উত্তরখান থানার কার্যক্রম। দারুস সালাম থানার কার্যক্রম চলছে গোলাটেকের ১০০ নম্বর একটি বহুতল বাড়িতে। যাত্রাবাড়ীর ধনিয়ার মুজাহিদনগরের ১৭১৯ নম্বর বাড়িতে চলছে কদমতলী থানার কার্যক্রম। মেরুল বাড্ডা প্রজেক্টের ১৭ নম্বর সড়কের ১২/এ নম্বর বাড়িতে চলছে বাড্ডা থানার কার্যক্রম। রূপনগর থানার কার্যক্রম চলছে এলাকাটির আরামবাগের ৭/এ নম্বর সেকশনের চার নম্বর সড়কের ডি-বস্নকের ১০ নম্বর করিম ম্যানশন নামের বহুতল বাড়িতে। উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৪৮ নম্বর বাড়িতে চলছে উত্তরা পশ্চিম থানার কার্যক্রম। মগবাজারের মধুবাগের ৩৫৮/১ নম্বর বাড়িতে চলছে হাতিরঝিল থানার কার্যক্রম। ভাষানটেক থানার কার্যক্রম চলছে ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের (বিআরপি) কমিউনিটি সেন্টারের নিচতলার গাড়ি পার্কিং ও দ্বিতীয় তলায়। এর মধ্যে বেশ কিছু থানার জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে ভবন নির্মিত হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের এস্টেট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ২৩টি থানার কার্যক্রম চলছে নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ করে। সেগুলো হচ্ছে- নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, পল্টন মডেল, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, মিরপুর, উত্তরা পূর্ব, কোতোয়ালি, ভাটারা, ডেমরা, হাজারীবাগ ধানমন্ডি, পলস্নবী, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, শের-ই-বাংলা নগর, ক্যান্টনমেন্ট, সবুজবাগ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, তুরাগ ও শাহজাহানপুর থানা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, শুধু ভাড়া নয়, রীতিমতো পরিত্যক্ত বাড়িতেও চলছে ঢাকার তিনটি থানার কার্যক্রম। যার মধ্যে গুলশান থানার কার্যক্রম চলছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গুলশানের সিডবিস্নউএন (বি)-৩২ নম্বরের ১১৫ নম্বর বাড়িতে। মতিঝিল থানার কার্যক্রম চলছে ১৪০ নম্বর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার বাড়িটিতে। আর বনানী পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চলছে বনানী মডেল থানার কার্যক্রম। এ ছাড়া বিমানবন্দর থানার কার্যক্রম চলছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কার্গোভিলেজে। গুলশান থানার নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ চলছে। বহুতল থানা ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো পুরনো জায়গাতেই চলছে থানার সার্বিক কার্যক্রম। এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ফারুক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, একটি থানার সার্বিক কার্যক্রম চালাতে যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ জায়গা ভাড়া চলা থানাগুলোর নেই। ফোর্সদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা যানবাহন রাখারও তেমন কোনো জায়গা নেই। ফলে জব্দ করা মামলার আলামত যত্রতত্রভাবে রাখতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে থানাগুলো নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম চালাতে পারে। থানা পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, রাজধানীর একটি থানার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালাতে কম করে হলেও তিন বিঘা জায়গা লাগে। ওই জায়গার ওপর বহুতল ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হলেও একটি থানা তার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালাতে পারে। অথচ ঢাকায় এক সঙ্গে তিন বিঘা জায়গা পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া যেসব বাড়ি ভাড়া নিয়ে থানার কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে, সেসব বাড়ি মানুষের থাকার জন্য তৈরি করা। একটি থানা পরিচালনা করতে প্রতিটি কক্ষ যে পরিমাণ বড় থাকার কথা, তা ভাড়া বাড়িতে পাওয়া যায় না। এ জন্য থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক কারণেই ব্যাহত হয়। ফোর্সদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, থানার কার্যক্রম ভাড়া করা বাড়িতে চালানো সত্যিকার অর্থেই কঠিন। এতে পুলিশের কাজের সমস্যা হয়। আশপাশে বসবাস করা মানুষেরও সমস্যা হয়। কারণ, থানার কার্যক্রম চলে ২৪ ঘণ্টা। থানা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিজস্ব ভবনে থাকলে পুলিশের কার্যক্রম চালানো সহজ হয়। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে সরকারি খাস জমি লিজ নিয়ে বা বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করে বা জমি কিনে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো যায়। এটি সম্ভব হলে রাষ্ট্রের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। নিজস্ব ভবন থাকলে ওইসব টাকা পুলিশের অন্য কোনো উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা যাবে। এতে জনগণ ও পুলিশ সুবিধা পাবে।