মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
জাতিসংঘের হাইকমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী

প্রত্যাবাসনে দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

১১ লাখের বেশি বাস্তুচু্যত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে কক্সবাজারের উখিয়ার গভীর বনভূমি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ মে ২০২২, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঙ্গলবার গণভবনে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন -ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তায় অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার কারণে হতাশ হয়ে পড়ছে, যার একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। এতে তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করছে।'

মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে গেলে এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, '১১ লাখের বেশি বাস্তুচু্যত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে কক্সবাজারের উখিয়ার গভীর বনভূমি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। গাছ কাটার মাধ্যমে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে, পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।'

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওই শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর যে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে, সে কথাও তুলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, 'রাখাইন রাজ্যে যেমন আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম ও ভাষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অনুসরণ করে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।'

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ অস্থায়ী আবাস গড়ার কথাও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী ওই আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু, রাষ্ট্রহীন ও বাস্তুচু্যত ব্যক্তিদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

বৈঠকে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি শেখ হাসিনার আশঙ্কার সঙ্গে একমত হন যে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ অবস্থান তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু করতে তিনি বর্তমান মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করেছেন। তারা প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্মত হয়েছে। ইউএনএইচসিআর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।

বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।

রোহিঙ্গা ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফগানিস্তান সংকট বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে ভাসানচর যান। একই সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলও ছিলেন।

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) গোবিন্দ চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিনিধি দল হেলিকপ্টারযোগে হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। পরে তারা বিভিন্ন ক্লাস্টারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের খোঁজ-খবর নেন।

ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ইমদাদুল হক বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা ও সেবা সরেজমিন দেখছেন তারা। ভাসানচর থানা পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিল।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নকে অভিনন্দন

এদিকে গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া এলিজাবেথ বোর্নকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার পাঠানো এই অভিনন্দন বার্তায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের কথাও তুলে ধরা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

ফরাসি নতুন প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'রাজনীতিবিদ ও প্রশাসক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা আপনার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হয়ে উঠবে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে আপনার অবদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।'

চিঠিতে অর্ধশতক আগে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ, উন্নয়ন, বিমান চলাচল, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ ও জ্ঞান বিনিময়ের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সহযোগিতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হয়েছে বলে উলেস্নখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অভিন্দন বার্তায় তিনি লিখেছেন, 'আমাদের মূল্যবান অংশীদারিত্বকে আরও বৈচিত্র্য দিতে আমি আন্তরিকভাবে আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।'

চিঠির শেষে এলিজাবেথ বোর্নের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করে বন্ধুসুলভ ফরাসি জনগণের শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ১৭ মে আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এলিজাবেথ বোর্ন। তিনি এর আগে ফ্রান্সের শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁ দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভার জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এলিজাবেথকে বেছে নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে