বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা

৩০ শতাংশের খেলার মাঠ নেই হ অনেক স্কুলে নেই শহীদ মিনার
আমানুর রহমান
  ২৫ মে ২০২২, ০০:০০

ঢাকা মহানগরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৩০ শতাংশে খেলার মাঠ নেই। শিশুদের শারীরিক মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে খেলার মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পর্যন্ত রাজধানীর প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যানও নেই।

জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠের পরিসংখ্যানের তথ্য চাওয়া হয়নি। এজন্য তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীতাও তারা অনুভব করেননি। সঙ্গত কারণেই মাঠের তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসের সংরক্ষণে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর আগে শিশুদের শরীর চর্চার বিধান বাধ্যতামূলক। করোনাকালে সীমিত পরিসরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা থাকলেও শরীর চর্চা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর প্রাথমিক ক্লাস শুরুর পর আবারও স্কুলে সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর অনেক স্থানে বিশেষ করে পুরান ঢাকার স্কুলগুলোয় মাঠ নেই নেই শহীদ মিনারও। এমন কয়েকটি স্কুল আছে এক বা দু-তিন রুমের। এরই মধ্যে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এমন কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮-১০ জন। শিক্ষক আছেন দুইজন বা একজনও।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৩৪২টি। সর্বশেষ রেজিস্ট্রার্ড প্রাইমারি স্কুল হিসেবে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয় ৪৭টি। এ ছাড়া প্রতিটি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পে ১৫শ' স্কুলের মধ্যে ১১টা নির্মিত হয়েছে ঢাকা মহানগরে। এসব স্কুলে খেলার মাঠ রয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকা মহানগরে ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ নেই।

ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা যায়যায়দিনকে বলেন, আনুমানিক ৩০ শতাংশ স্কুলে মাঠ নেই। বাচ্চাদের সমাবেশ করার মতো পর্যাপ্ত খালি জায়গারও অভাব রয়েছে।

গত ১১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে অভিভাবকদের তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে এমন কিছু নির্দেশনাও ছিল তার বক্তব্যে। কিন্তু এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো পরিবেশই দেখা যায়নি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের সামনে খোলা জায়গা না থাকায় কোমলমতি শিশুরা ছোটাছুটি করতে বা দৌড়াতে পারে না। শিশুরা মা-বাবার হাত ধরে এসে ক্লাসরুমেই প্রবেশ করে এবং ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে যায়। কোনো কোনো স্কুলে ক্লাস শুরুর আগে ক্লাসের মধ্যেই নিজ আসনে দাঁড়িয়ে-বসে পিটি-প্যারেড সম্পন্ন করে থাকে।

রাজধানীতে মাঠ ছাড়া উলেস্নখযোগ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, মিরপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পাশের চম্পা-পারুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে স্কুল ভবন ছাড়া খেলার মাঠ নেই। মিরপুরের মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা। পুরনো ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ। সূত্রাপুরের মুসলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাললয়ের খেলার মাঠ তো নেই-ই। এটি এক রুমের প্রতিষ্ঠান। এর শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৪। পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকার বাবু বাজার রাস্তার ওপর থাকা হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও বেহাল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী ২০২৪ সালে মধ্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নতুন আরও ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্যে উত্তরাতে তিনটি ও পূর্বাচলে ১১টি। এসব বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। এ স্কুলগুলো নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনে আধুনিক ও ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ, শিশুদের খেলাধুলা, বিনোদন ও অভিভাবকদের ওয়েটিং রুমসহ শিক্ষাপোযোগী সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকল্প।

ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে বিদ্যমান ৩৪২টির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'দৃষ্টি নন্দনকরণ' প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়কে সংস্কার করা হবে। ১ হাজার ১৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। পুরনো যেসব স্কুলের সামনে মাঠ ও খোলা জায়গা নেই সেসব স্কুলের নিচতলায় প্যারেড-পিটি'র জন্য খালি জায়গা রাখা হবে। সেখানে কোনো ক্লাসরুম বা অফিস রুম করা হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে