ভেড়ার মাংসের স্বাদ ও গন্ধের গুণগত মান উন্নয়নে সফলতা
প্রকাশ | ২৭ মে ২০২২, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা থাকলেও অস্বাভাবিক গন্ধ, ঘন শক্তপেশী ও অধিক চর্বিসহ বিভিন্ন কারণে ভেড়ার মাংসের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অরুচি দেখা যায়। এসব বাধা কাটিয়ে ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও গুনগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই দশক ধরে গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মো. আল মামুন। ভেড়ার রক্ত ৭ শতাংশ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে মাংসের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে।
রোববার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের সম্মেলনকক্ষে 'অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ভেড়ার মাংস' শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান গবেষক ডক্টর আল মামুন।
গবেষক জানান, বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য মতে, বিশ্বে শতকরা ২২ ভাগ প্রোটিনের চাহিদা মেটায় ভেড়ার মাংস। কিন্তু এক ধরনের অস্বাভাবিক গন্ধ, ঘন শক্তপেশী ও অধিক চর্বিযুক্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করেন না ভেড়ার মাংস। তাই ভেড়ার খাদ্য তালিকায় ঔষধিগুণসম্পন্ন পস্নানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতার ব্যবহার করে ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাংসের গুণগত মানও উন্নত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঔষধি ঘাসের উপাদান মাংসের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন এনেছে। পস্নানটেইন ও রসুন পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভেড়ার বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাংসের গুণগত মানের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, গবেষণা চলাকালীন ভেড়ার খাবারে অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ পস্নানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহার করে এই ফলাফল পেয়েছেন। এ দুটি উপাদান ব্যবহার করার ফলে ভেড়ার ২০-২৬ শতাংশ শারীরিক বৃদ্ধি, ৫-৭ শতাংশ মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ৭ শতাংশ রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়া এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ চর্বি এবং পেলভিক চর্বি যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ কমে গেছে। উপাদান দুটি ব্যবহারের ফলে ভেড়ার মাংসে ১৫ শতাংশ কোলেস্টরল কমিয়ে দিয়েছে এবং ৩০ শতাংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘাস ব্যবহারে ভেড়া থেকে ১১-১৪ শতাংশ কম মিথেন নির্গত হয়, যা পরিবেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
অধ্যাপক ডক্টর আল মামুন ২০০৪ সালে জাপানের ইয়াতো ইউনিভার্সিটিতে পস্নানটেইন ঘাসের ওপর গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় সাফল্যের জন্য তিনি সেখানে প্রেসিডেন্ট ও ডিন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
কর্মশালায় পশু পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডক্টর রাখী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর খান মো. সাইফুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এ কে এম জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন- ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডক্টর এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।