টাইমের বষের্সরায় শহিদুল আলমও

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শহিদুল আলম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম এবার নিপীড়িত সাংবাদিকদের বষের্সরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ তালিকায় তুরস্কে খুন হওয়া সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি, মিয়ানমারে কারাদÐ পাওয়া বাতার্ সংস্থা রয়টাসের্র দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউ যেমন আছেন, আছেন গ্রেপ্তারের পর ১০৭ দিন কারাবন্দি থাকা বাংলাদেশের আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও। শহিদুল আলমের বিষয়ে টাইম বলেছে, গত আগস্টে বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে সাক্ষাৎকার দেয়ার অভিযোগে শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের পর ১০০ দিনের বেশি আটক রাখা হয়। বতর্মানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি সবোর্চ্চ ১৪ বছর পযর্ন্ত কারাদÐের মুখোমুখি হতে পারেন। এরপরও তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নিবার্চনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কথা ভাবছেন। নিবার্চনে কারচুপির আশঙ্কা থেকে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে টাইমকে জানিয়েছেন। এই আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকমীের্ক নিয়ে লেখা এক প্রবন্ধে টাইম বলেছে, লন্ডনে রসায়নশাস্ত্রে পিএইচডি করার সময় শহিদুল আলম একটি ক্যামেরা কেনেন। আশির দশকে বন্ধুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখাই ছিল এর উদ্দেশ্য। তবে সেই ক্যামেরাই পরে তঁার সাবর্ক্ষণিক সঙ্গী হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক পরিবতর্ন নিয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি। ৬৩ বছর বয়সী শহিদুল আলম বলেন, ‘অধিকারকমীর্ হিসেবে কাজ করার সময় বুঝতে পারলাম, একটি ছবি কত গুরুত্বপূণর্ প্রভাব ফেলতে পারে। তখন আমি আলোকচিত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ আশির দশকে স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র আন্দোলনের ছবি তিনি তুলেছেন। আর এর মাধ্যমেই তিনি বাংলাদেশের নাগরিক অধিকারের জন্য নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৮৯ সালে শহিদুল আলম তঁার দীঘির্দনের সঙ্গী নৃতাত্তি¡ক ও লেখক রেহনুমা আহমেদের সঙ্গে মিলে দৃক প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রায় ১০ বছর পর ১৯৯৮ সালে তিনি আলোকচিত্রবিষয়ক শিক্ষার জন্য পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালে তিনি প্রথমবারের মতো এশিয়ার আন্তজাির্তক আলোকচিত্র উৎসব ছবি মেলার আয়োজন করেন। তিনি দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। টাইম তাদের প্রধান প্রতিবেদনের সঙ্গে ছবিটি ব্যবহার করেছে। ছবি তুলেই শহিদুল আলম সমাজবদলের লড়াই চালিয়ে যেতে চান বলে টাইমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। যুদ্ধটা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য। এর জন্য যা দরকার, তা হলো যোদ্ধা।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখে। আপনি শিক্ষক, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী বা সাংবাদিক, যা-ই হোন না কেন, প্রত্যেকের উচিত ক্রমাগত লড়ে যাওয়া।’ শহিদুল আলম গত ৫ আগস্ট কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেন। সরকারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিন্তাবিদ নোয়াম চমস্কি ও লেখক অরুন্ধতী রায়ের মতো আন্তজাির্তক ব্যক্তিত্বরা শহিদুল আলমকে মুক্তির প্রচারে যোগ দেন। তিনি ১০৭ দিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পান। জামিনে থাকা অবস্থায় আগামী নিবার্চনে দায়িত্ব পালন ঝুঁকিপূণর্ কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিক। তুমি যা করো, সেটা তোমাকে করতেই হবে।’ টাইমের বষের্সরার তালিকায় আছেন ফিলিপাইনের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট র?্যাপলারের প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা, যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের আনাপোলিসের সংবাদপত্র ক্যাপিটাল গেজেটের সংবাদকমীর্রাও। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতাতের্র সমালোচক হিসেবে র?্যাপলারের পরিচিতি রয়েছে। আর ক্যাপিটাল গেজেটের কাযার্লয়ে গত জুনে বন্দুকধারীর হামলায় পঁাচজন নিহত হন। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর গত ২ অক্টোবর খুন হন সৌদি রাজপরিবারের কড়া সমালোচক ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক খাসোগি। আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন রয়টাসের্র দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউ। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের দায়ে তাদের দÐ দিয়েছেন দেশটির আদালত। টাইম অবলম্বনে