শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আসছে কোরবানি

মেহেরপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ২ লাখ পশু

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
মেহেরপুরের একটি গরুর খামার -যাযাদি

আর ক'দিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত মেহেরপুরের খামারিরা। ঈদ শেষে অতি যত্নে পালিত গরু-ছাগল বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছে খামারিদের। গরু- ছাগল বিক্রি নিয়ে কোনো শঙ্কা না থাকলেও শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা ও বিভিন্ন হাটে ওঠানো শুরু করেছে ব্যবসায়ী ও খামারিরা। অনেক আশা নিয়ে গরুর পরিচর্যা করলেও হাটে যেতে পথে পথে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ভারতীয় গরু আমদানিসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে চিন্তাও কম নয়। প্রতি বছরই এই কোরবানির সময় একশ্রেণির চাঁদাবাজকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে সে শঙ্কা কমে এলেও চাঁদাবাজি হবে না এমন নিশ্চয়তা এখনো পায়নি গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের কৃষক ইনসান আলী তিন বছর ধরে অতি যত্নে পালন করেছেন মুজিবনগরের রাজাবাবুকে (পালিত গরুর নাম)। রাজাবাবু দৈনিক ১২০০ টাকার খাবার খায়। নিয়মিত হাঁটানো হয়। গোসল করানো হয় তিনবার। উপরে ২৪ ঘণ্টা ঘুরে ফ্যান। কারণ রাজাবাবু গরম একদম সহ্য করতে পারে না। গরুটির ওজন ৩৮ মণ। দাম হাঁকানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এবার কোরবানির হাটে ওঠানোর অপেক্ষায় মুজিবনগরের রাজাবাবু।

রাজাবাবুর মালিক ইনসান আলী জানান, কোরবানির জন্য বিশালাকায় গরুর ক্রেতা চট্টগ্রাম ও সিলেটে। এবার সিলেট ভয়াবহ বন্যায় ডুবে যাওয়ায় রাজাবাবুকে নিয়ে বিক্রির শঙ্কা রয়েছে। তবে ছোট বা মাঝারি গরুর ক্রেতার কোনো সমস্যা নেই।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের কৃষক আকবর বলেন, গরু বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে অনেক স্বপ্ন পূরণের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেখছেন তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর স্বপ্ন।

তার দাবি নিরাপদ যাতায়াত, নিরাপত্তা আর চোরাপথে অবাধে ভারতীয় গরুর আমদানি বন্ধ করতে হবে। ঠিকভাবে গরু বিক্রি করতে পারলে সব আশা পূরণ হবে তাদের। সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের খামারি রিপন হোসেন বলেন, এবার মেহেরপুরে কোরবানির জন্য ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০-২৫ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। কোরবানির ঈদে গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের হাটগুলোতে মেহেরপুরের গরু বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আগের মতো চোরাইপথে ভারতীয় গরুর আমদানি নিয়ে চিন্তিত তারা।

বছর দশেক আগেও জেলায় গরু পালনের চিত্র ছিল ভিন্ন। সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের গৃহিণী আলেয়া খাতুন এমনটি জানিয়ে বললেন, 'দরিদ্র পরিবারে সচ্ছলতার চাকা ঘুরিয়েছে গরু পালন। পুরুষরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় আমরাই মূলত গরু পালন করছি। এখন সুখের দিন এসেছে। এবার তিনটি গরু পালন করেছি। আশা করছি ছয় লাখ টাকা হবে।'

এবারের কোরবানির ঈদের জন্য জেলার ৩৭৯টি বাণিজ্যিক খামারসহ অন্তত ১৮ হাজার পারিবারিক খামার থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৯ হাজার গরু। ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে মেহেরপুরের কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ৯৮ হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি জন্য বাইরের জেলার পশুহাটগুলোতে ওঠানো হবে। বড় বড় খামারের পাশাপাশি অনেকেই পারিবারিকভাবেও গরু পালন করছেন। দেশীয় খাবার বিচালি, চালের কুঁড়া, খৈল, কাঁচা ঘাস খাইয়ে গুরু মোটাতাজাকরণ করছেন তারা। গরু মোটাতাজাকরণ করতে কোনো ধরনের ক্ষতিকারক স্টেরয়েড বা হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন না এ জেলার খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গির আলম বলেন, মোটা গরু মানেই হরমোন বা স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে এ ধারণা ঠিক নয়। একটু চেষ্টা করলেই কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরু চিনতে পারবেন ক্রেতারা। এছাড়াও হাটে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহারে মোটাতাজাকরণ গরু না তুলতে পারে সেজন্য প্রতিটি হাটে মোবাইল কোর্টসহ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম থাকবে। খামারিরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পশু হাটে নিয়ে যেতে পারে তার জন্য প্রশাসনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম বলেন, হাটগুলোতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা এখন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি হাটে মেশিন বসানো হবে। ক্রেতা-বিক্রেতারা নগদ টাকা পরিবহণে অসুবিধা মনে করলে পুলিশের সহায়তা নিতে পারবে। বড় ধরনের নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রেও পুলিশের সহায়তা থাকবে। আশা করছি ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। পুলিশ সব সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশে আছে, থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে