শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শতবর্ষ অতিক্রম করেছে এরই মধ্যে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালে আজকের দিনে (পহেলা জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ দিনটি 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'গবেষণা ও উদ্ভাবন :ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা'। উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. আখতারুজ্জামান আজ সকাল ১০টায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

নানা চড়াই-উতরাই আর পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের

হাত ধরেই বাঙালি জাতি লাভ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯১২ সালের ২৭ মে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯১৩ সালে নাথান কমিশনের ইতিবাচক রিপোর্ট প্রদান করলে সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই রিপোর্টটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হয়। কিন্তু এর পরবর্তী বছরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বাঙালির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে শঙ্কা দেখা দেয়। তবে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ধাপ শেষ হয়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় 'দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০' পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি প্রদান করেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব সন্দেহের অবকাশ ঘটে। এই আইনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইনটির বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটতে থাকে। যার প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কার্জন হল প্রাঙ্গণে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২'র ভাষা আন্দোলন, '৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণ-অভু্যত্থান, '৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি যুক্ত। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনও এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতারই অংশ।

শুরুতে তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী ও তিনটি আবাসিক হল নিয়ে শুরু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ১০২ বছরের পথ-পরিক্রমায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদের অধীনে ৮৪টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৫৯টি গবেষণা বু্যরো ও কেন্দ্র, ১৯টি আবাসিক হল, ৪টি ছাত্রী হোস্টেল ছাড়াও বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি। শিক্ষক সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হবে দিনটি। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হবে। দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলাভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে 'গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পলস্নী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে