বন্যার আঘাত

কুড়িগ্রামে কৃষিতে প্রায় ১২৮ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
বন্যার কারণে কুড়িগ্রামের কৃষি খাতে এ বছর ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট ও আউশ আবাদ ও শাকসবজি চাষে। চলতি বন্যায় জেলায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসল বিনষ্ট হওয়ায় ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ও চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। \হজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ মৌসুমে ৩৪ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল। অসময়ের বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা বন্যার ফলে পানিতে তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমি। ১০ থেকে ১৫ দিন ব্যাপী স্থায়ী বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমির ফসল। আংশিক ক্ষতি হয় ৮ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমির ফসল। এতে উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে মোট ৩৫ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন ফসলের। যা মোট ফসলের ২৫ দশমিক ৫৭ ভাগ। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট, আউশ ধান ও সবজি চাষে। মাঠে চাষ করা ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর পাটের মধ্যে ক্ষতি হয়েছে \হ৯ হাজার ৫২১ হেক্টরের আউশ ধান, আবাদ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর। অপরদিকে সবজি চাষ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে, ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ হেক্টর জমির ফসল। এরমধ্যে মরিচের ক্ষতি হয়েছে ১৫৪ হেক্টর জমিতে। কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের হিসেবে এ বছর ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, কুড়িগ্রামে বর্তমানে মাঠগুলোতে চাষ করা হয়েছে, আমন বীজতলা, পাট, আউশ ধান, তিল, শাক-সবজি, কাউন, চিনা, কলা, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মরিচ, আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, আখ ও মুগডাল। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ছড়ার পাড় গ্রামের মৃত শমসের আলীর পুত্র পটল চাষী শামসুল আলম (৬০) জানান, 'আমি ৮ বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছি। আমার ক্যাশ ছিল ৫০ হাজার টাকা, এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি ৩০ হাজার টাকা, আর অন্যের নিকট সুদের পর নিছি ২০ হাজার টাকা। আমার মোট ৪ লাখ টাকা খরচ। তারমধ্যে অর্ধেক টাকা তুলতে পারছি। এবার আমি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন।' একই গ্রামের মৃত ফেকের আলীর ছেলে জব্বার আলী (৪৫) জানান, 'এত কষ্ট করে আবাদ করি। আবাদ করিয়া কোন বছর লাভ হয়, কোন বছর তহবিল ওঠে। এবার একবারে তহবিলসহ গায়েব।' উত্তর নওয়াব আক্ষষ পাড়ার কৃষক হুজুগ আলী জানান, 'গত ৭/৮ বছর ধরে এখানকার কৃষক লাউ, কুমড়া, পটল, ভেরেন্ডি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, জালি কুমড়া, চিচিঙ্গা, বেগুন, রসুন, পিঁয়াজ, মরিচ, আদা, এগুলা চাষ করে পেট চালাই। এবার আগাম বন্যা এসে সর্বনাশ করে দিল।' এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, আমরা সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরকারকে অবগত করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ৭ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনার একটি বরাদ্দ পেয়েছি।