নোয়াখালীতে খামারে গরু কেনাবেচা জমে উঠেছে

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০

আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী
নোয়াখালীর জেলার কোথাও এখনো কোরবানির পশুর হাট জমে না উঠলেও বিভিন্ন খামারে কেনাবেচা জমে উঠেছে। বিভিন্ন হাট ঘুরে গরু কেনার ঝামেলা ও ঝুঁকি এড়াতে খামার থেকে পছন্দসই গরু সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এবার জেলার অনেকগুলো খামারে লাইভ ওয়েট স্কেলে দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। খামারে গরু বেচাকেনায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা কোনো পক্ষকেই বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না। এতে দুইপক্ষই লাভবান হচ্ছেন। খামার থেকে গরু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, হাসিল (টোল) না দেওয়া। সরেজমিন দেখা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামে মানফাত মিট-ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরি ফার্মে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে গরু কিনতে আসছেন ক্রেতারা। প্রাকৃতিক উপায়ে দেশি গরু মোটা তাজাকরণ ফার্মগুলোর মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিলস্না অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ খামারে গত পাঁচ বছর ধরে লাইভ ওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। খামারটিতে এবার বিক্রির জন্য সর্বনিম্ন দুইশ' কেজি থেকে সর্বোচ্চ সাতশ' কেজি ওজনের দুইশ' গরু রয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ৫০টি গরু বিক্রির জন্য বুকিং হয়ে গেছে। এখানে প্রতি কেজি ষাঁড়ের মূল্য ৪৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি বলদের মূল ধরা হয়েছে ৪৮০ টাকা। এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে খামারটিতে। ক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বারের অভিজ্ঞতায় এবারও ভালো গরু পাওয়ার আশায় এ খামারে আসছেন তারা। এখানে পছন্দসই গরু ঠিক করে বুকিং দিয়ে ঈদের আগ পর্যন্ত খামারেই রাখার সুবিধা পাচ্ছেন তারা। গরু নেওয়ার সময় পরিমাপ করে বুকিংয়ের সময় নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ঈদের দিন সকালেও বাড়িতে গরু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। খামারের কর্মরত শ্রমিক আবদুর রহিম জানান, ঈদের কয়েক মাস আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি গরু সংগ্রহ করে এখানে এনে কাছের সরকারি পশু চিকিৎকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দেশি খাবার ও রোগবালাই প্রতিষেধক দিয়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করা হয়। খামারের সুন্দর, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে কারও পছন্দ হবে। মানফাত মিট-ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, ২০১৮ সালে ৭ একর পতিত জমিতে ৮০টি গরু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতিবছর ২০০ গরু বিক্রি হয় এ খামারে। তার পুরো খামারটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া। শেডের ভেতরে প্রতিটি গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। রয়েছে গরুর গোসল, চিকিৎসা ও প্রজননের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। তিনি বলেন, 'নোয়াখালীতে সর্বপ্রথম আমাদের খামারেই লাইভ ওয়েট স্কেলে গরু বিক্রি শুরু করি। আমি মনে করি বাজারে গেলে মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। কোরবানির হাটে দালাল থাকে তারা মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। খামারে সুন্দর পছন্দের গরু লাইভ ওয়েট স্কেলে কিনতে পারে। আমরা শতভাগ সুস্থ ও সুঠাম দেহের গরু দিয়ে থাকি। খামারে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার আবার কখনো দুইবার গরুগুলোকে গোসল করানো হয় এবং পরিচর্যা করা হয়। এখানে ঘাসের চাষ করা ঘাসের পাশাপাশি খর, ভুসি ও নিরাপদ পোলট্রি ফিড খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে।' গরুর বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার গরু মোটা তাজাকরণে খামারিদের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ বেড়েছে। গরুর বাজার দরের ওপরে এর প্রভাব পড়েছে। এরপরও নিছক লাভের চিন্তা না করে পবিত্র ঈদে কোরবানির জন্য মানুষকে সুস্থ, সবল গরু দিতে পেয়ে মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি সাওয়াবের অধিকারী হওয়াই আমাদের মূল্য লক্ষ্য।' জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী রফিকুজ্জামান জানান, নোয়াখালীতে কোরবানির জন্য এবার ১ লাখ গবাদি পশু লালন পালন করা হচ্ছে, যা জেলায় চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার বেশি। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সঙ্গে সভা করে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে একাধিক অনলাইনে পস্ন্যাটফর্মে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।