জমে ওঠার অপেক্ষায় কোরবানির হাট

অতিরিক্ত দাম চাওয়ার অভিযোগ ক্রেতাদের ম গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এই অবস্থা বলছেন বিক্রেতারা

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

লাইজুল ইসলাম
প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রাজধানীর ২০টি হাট। বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব হাটে পশু বিক্রি শুরু হবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু আসতে শুরু করেছে এসব হাটে। হাটগুলোতে শামিয়ানা-ত্রিপল টাঙিয়ে কোরবানির পশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, কিছু বেচাবিক্রি শুরু হলেও তা নগন্য। পশুর দাম বাড়তি হওয়ায় ক্রেতারা কিছুটা সময় নিচ্ছেন। আর গো-খাদ্যের অতি মূল্যে পশুর দাম বেশি বলে জানিয়েছেন বেপারীরা। রোববার সকালে রাজধানীর আফতাবনগর গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির পশু জমতে শুরু করেছে। হাটের বিভিন্ন স্থানে গরু বাঁধার জন্য বাঁশ পোঁতা হয়েছে। অনেকে আবার নিজেদের মতো করে বাঁশ পুঁতে নিচ্ছেন। যারা বড় খামারি তারা বড় করে শামিয়ানা ও ত্রিপল টাঙাচ্ছেন। অনেকে গরু নিয়ে আসার আগেই লোক দিয়ে স্থান নির্ধারণ প্রস্তুতিপর্ব সারছেন। পুরো হাটে বিদু্যৎ বিভাগ কাজ করছে। প্রতিটি স্থানে করা হচ্ছে লাইটের ব্যবস্থা। শুক্রবার-শনিবার ও রোববার মধ্য রাত বা সকালে বেশির ভাগ বেপারী এসেছেন তাদের গরু নিয়ে। কেউ কেউ ছাগল নিয়েও এসেছেন। যেহেতু রাস্তায় অনেক যানজট হয় তাই ব্যবসায়ীরা তাদের পশু নিয়ে আগেই চলে এসেছেন। এ হাটে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গরু ব্যবসায়ী মামুন মিয়া এসেছেন ২৭টি গরু নিয়ে। তিনি বলেন, 'সকালে এসে পৌঁছেছি। শনিবার বিকেলে রওনা করেছি গরু নিয়ে। রাস্তায় অনেক যানজট, তাই আমরা একটু আগেই চলে আসলাম। আজকে সকালে যারা রওনা দিয়েছেন তারা আরও দেরি করে আসবেন। গরমে গরুর সমস্যা হয়। অনেক গরু স্ট্রোক করে মারাও যায়। তাই আমরা একটু আগেই চলে এসেছি।' মাগুরা থেকে আসা মোহন বলেন, 'এখানে থাকতে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু রাস্তার ঝামেলা এড়াতে আমরা রাতে রওনা দিয়েছি। সকালে চলে এসেছি। এ সময়টাতে গরুর গরমও কম লেগেছে। তাই আমাদের সুবিধা হয়েছে। আগে আসার কারণে ইচ্ছামতো স্থানে গরু রাখতে পারলাম। গাছের নিচে রাখতে পারায় আমাদের সুবিধা হয়েছে।' কুষ্টিয়া থেকে আসা হামিদ মিয়া জানান, রাতে এসে গরু নামানোর সময় তার একটি গরু হারিয়ে গেছে। এখনও খুঁজে পাননি। নামানোর সময় গরুটি দৌড়ে পালিয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, গাবতলী পশুর হাটেও চলছে প্রস্তুতি। পোঁতা হচ্ছে বাঁশ। টাঙানো হচ্ছে ত্রিপল ও শামিয়ানা। খামার মালিক ও ব্যবসায়ীরা দু-একটি করে বড় গরু নিয়ে এসেছেন। তবে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু এখনও আসেনি। রোববার সকালে গাবতলীতে আসা গরুর বেপারী ওসমান বলেন, 'একটি বিশাল সাইজের গরু নিয়ে এসেছি। এটি আমার নিজের গরু। এর সঙ্গে আরও বেশ কিছু গরু এনেছি। আশা করি, সবই বিক্রি হবে। বড় গরুটির নাম রাখা হয়নি। আমার গরুটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের, ৩ বছর ৪ মাস বয়স। গরুটির দাম চাইছি ২৫ লাখ টাকা। ঝিনাইদহে কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি তাই এই হাটে নিয়ে এসেছি। আর যেহেতু এসেছি তাই সঙ্গে আরও বেশ কিছু গরু নিয়ে এসেছি। আশা করি এখানে আমার কাঙ্ক্ষিত দাম পাব।' কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে শুক্রবার রাতে গাবতলীতে আনা হয়েছে 'কালো রাজা' নামের এক বিশাল গরু। ব্যাপারী সবুজ বলেন, 'শুক্রবার রাতে ২টি বড় গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছি। কালো রাজার দাম চাইছি ১০ লাখ টাকা। ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পেলে বিক্রি করে দেব। আরেকটি গরু আছে ওটার দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। ১২ লাখ টাকা পেলে বিক্রি করে বাড়ি চলে যাব।' হাট ঘুরে দেখা যায়, গাবতলীর টিনশেড হাটে সব সময়ের মতো গরু আছে। তবে আরও যেসব স্থানে ঈদ উপলক্ষে গরুর হাট বসে সেগুলো খালি পড়ে আছে। মাঝারি ও বড় সাইজের গরুর পাশাপাশি রোববার বেশ কিছু ছোট গরুও এসেছে গাবতলী, আফতাবনগর ও শনিরআখড়া হাটে। এসব হাট মঙ্গলবারের মধ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার সকালে কিছুটা বৃষ্টি হাটে আশা ক্রেতাদের কিছুটা ঝামেলায় ফেলেছে। যদিও হাটে এখনো ক্রেতা খরা। এখন পর্যন্ত যারা কোরবানির হাটে যাচ্ছেন তারা কেনার জন্য নয়, পশু দেখতে যাচ্ছেন। গাবতলি হাটে আসা শামীম আহমদ জানান, তিনি কোরবানির পশু দেখতে এসেছেন। কিনবেন আরও পরে। তিনি বলেন, 'এখন গরুর দাম বেশি। এর কারণ বাজারে গরু কম আসা। আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যে গরুতে ভরে যাবে হাট। তখন দেখা যাবে, গরুর প্রকৃত দাম কত ওঠে। তবে মনে হচ্ছে এবার গরুর দাম বেশি হবে।' আফতাবনগর হাটে সেলিম আহমেদ গরুর দাম জিজ্ঞেস করছিলেন। এক পর্যায়ে মেজাজ হরিয়ে চলে আসেন। তিনি বলেন, 'এত দাম চাইছে যা বলার বাইরে। কোরবানির গরু কিনব বলে কি যা তা দাম চাইবে। এটা কি হয়। তবে এখন একটু বেশি দাম চাইতেই পারে। কারণ এখনো তেমন গরু এখানে আসেনি। দুয়েক দিনের মধ্যে পুরো হাট ভরে যাবে। তখন হয়তো এত দাম হবে না। তবে মনে হচ্ছে এবার গরুর দাম গত বছরে চাইতে কিছুটা বেশি যাবে।' এদিকে, রাজধানীর শনিরআখড়া হাট, তেজগাঁও পলিটেকনিক মাঠের হাট, কমলাপুর হাট ও মেরাদিয়া হাটসহ সব হাটেই এখন পর্যন্ত কোরবানির পশু তেমন আসেনি। যাও এসেছে সেগুলো বিক্রি শুরু হয়নি। সবাই আশা করছেন রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে হাটগুলো জমে উঠবে। বুধবার থেকে বিক্রি শুরু হবে।