কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য গোপন করে আবেদন নিয়ম ভেঙে শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) ফলাফল থাকতে হবে। সেই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোনো একটি শর্তের ক্ষেত্রে শিথিল রাখা যাবে। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরি প্রত্যাশীদের থেকে আবেদন আহ্বান করেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ উলিস্নখিত প্রত্যেকটির শর্ত ভেঙে নিয়োগ পেয়েছেন নকিবুল হাসান খান। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। জিপিএ ৫.০০ স্কেলে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.২০ পেয়ে পাস করা নকিবুল হাসান ভেঙেছেন প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত। তিনি ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০ যার চতুর্থ বিষয় ছাড়া ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০ তে। এই ফলাফলের পরও বিজ্ঞপ্তির নিয়মানুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও পেয়েছেন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রেও মো. নকিবুল হাসান খানের উলিস্নখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কৃত সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন এই শিক্ষক। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ডক্টর মোহিত উল আলম। তবে নিয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন এহসান হাবীব। তিনি বলেন, 'নকিবের সব কিছু ঠিকই আছে বলে আমি জানি। তবে এই নিয়োগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার নামের সম্পৃক্ততা পূর্ণ বক্তব্য সঠিক নয়।' বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পাস করলেও গণিত ছাড়া অন্য বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কোর্সে পেয়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি। অন্যদিকে ইংরেজিতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তির বাইরে গিয়েও নিয়োগ পেয়েছেন এই শিক্ষক। এছাড়া নিয়োগ আবেদনের ফরমেও তথ্য গোপন করেছেন। নিয়োগের এই তথ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, 'এভাবে বিজ্ঞপ্তির শর্ত না মানলে তো পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারার কথা নয়। সেই জায়গায় এত তথ্য গোপন রাখাটি শিক্ষক হিসেবে নৈতিকতার বিপর্যয় বলেই মনে করি।' সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর বিভাগের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মো. নকিবুল হাসান খানের নাম। অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহিত উল আলম এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমেই এই নিয়োগ পেয়েছিলেন মো. নকিবুল হাসান খান। \হবিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহিত উল আলম বলেন, 'আমার এগুলো মনে নেই। যা তথ্য রয়েছে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার দপ্তরে সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। এখন আমার আর কোনো দায়িত্ব নেই। তাই বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন। এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সাবেক রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী। অন্যদিকে নকিবুল হাসান খানের নিয়োগ পাওয়া বোর্ডে ছিলেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর সিরাজুল ইসলাম। যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি এই অধ্যাপকের। বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়োগ পেল কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ডক্টর হুমায়ুন কবীর বলেন, 'বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।' অভিযোগ রয়েছে নকিবুল হাসান খানের সরাসরি শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিল এই নিয়োগে বোর্ড এক্সপার্ট হিসেবে। নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের তথ্যের বিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির প্রধান ডক্টর আশরাফ বলেন, 'গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসান খানের একাডেমিক রেজাল্টের অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছি। এর আগে তা আমার জানা ছিল না।' নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সৌমিত্র শেখর বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সেটি নিয়ে আমি বলতে চাই না। তবে আমার দায়িত্বের সময়ে এমন করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো নিয়োগ তো দূরের কথা কোনো কাজই করা হবে না। এ রকম নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাম্য নয়। এই সকল ঘটনার জন্য আমাদের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।' বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া মো. নকিবুল হাসানের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি। একাধিকবার কল করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।