যুক্তরাষ্ট্রে লবিং ফামর্ ভাড়া করেছে জামায়াত

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আনুক‚ল্য পেতে জামায়াতে ইসলামী ওয়াশিংটনে ‘বড় অঙ্কের’ অথর্ দিয়ে একটি লবিং ফামর্ ভাড়া করেছে বলে দাবি করেছেন ‘লিবাটির্ সাউথ এশিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা সেথ ওল্ড মিক্সন। ওয়াশিংটনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘লিবাটির্ সাউথ এশিয়া’ দক্ষিণ এশিয়ায় ধমীর্য় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চচার্র বিকাশে কাজ করে থাকে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সেবা দেয় তারা। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির ‘হাডসন ইনস্টিটিউট’ নামের খ্যাতনামা একটি থিঙ্কট্যাংকের উদ্যোগে ‘স্ট্যাবিলিটি, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইসলামিজ্ম ইন বাংলাদেশ’ শীষর্ক আলোচনায় ওল্ডমিক্সন জামায়াতের বিষয়ে ওই তথ্য দেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা প্রচলিত আইনের সুযোগ নিয়ে মোটা অথর্ নিচ্ছেন, তারাও জানেন না, কারা দিচ্ছে এই অথর্ এবং কী তাদের মোটিভ। আর এই লবিং ফামের্র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে যাতে তারা (জামাত-শিবির) নিবিের্ঘœ রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে সে ধরনের চাপ প্রয়োগের দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। “এজন্য এই ফামর্ কংগ্রেস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দেন-দরবার করবে। অথার্ৎ তারা আবারও অপতৎপরতা চালাবে, কিন্তু সরকার কিছু বলতে পারবে নাÑএমন প্রত্যাশায় অথর্ ব্যয় করছে।” বাংলাদেশে ২০০১ সালের নিবার্চনের পরে এবং ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে ওল্ডমিক্সন বলেন, “সে সব সময়ে ধমীর্য় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়। শত শত মন্দির-গিজার্য় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নারীদের ধষর্ণ এবং হত্যার কথাও সকলেই জানি। এমনকি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপরও বেশ কয়েকটি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে।” গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেন সেথ ওল্ডমিক্সন। তিনি বলেন, “তিনি (কামাল) নিজেই অঙ্গীকার করেছিলেন যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে সে জোটে তিনি যাবেন না। কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার অঙ্গীকার ভঙ্গের নগ্ন একটি ঘটনা। জামায়াতের লোকজন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টে ২৫ আসনে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছে। “আন্তজাির্তক খ্যাতিসম্পন্ন একজন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ হিসেবে কামাল হোসেনের এ আচরণ সবাইকে হতভম্ব করেছে।” আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস বলেন, “জামায়াতে ইসলামীসহ ধমীর্য় উগ্রপন্থিদের দমনে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তাকে মাকির্ন প্রশাসনের সবার্ত্মক সমথর্ন দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ মানুষই যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। পিউ রিসাচর্ সেন্টার পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র থামিয়ে দিতে জামায়াতে ইসলামী নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। ওদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। আসন্ন নিবার্চনেও ওরা নাশকতার মতো ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে।” হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই রিপাবলিকান সদস্য সম্প্রতি আরেক ডেমোক্র্যাট সদস্যকে নিয়ে কংগ্রেসে বাংলাদেশ সম্পকির্ত একটি প্রস্তাব তোলেন, যেখানে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধমীর্য় দল ও সংগঠনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি আখ্যায়িত করা হয়। হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক পরিচালক হুসাইন হাক্কানীর সঞ্চালনায় এ আলোচনায় আরও অংশ নেন মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের ইসলামিস্ট ওয়াচের পরিচালক স্যাম ওয়েস্ট্রপ এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রকল্পের বিশ্লেষক আভা শঙ্কর। কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এশিয়ায় অথৈর্নতিক সাফল্যের শীষের্ উঠেছে। একই সাথে রাজনৈতিকভাবেও বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এই উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গণতন্ত্র থাকলে ওদের ধমর্-ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে আশঙ্কায় সামনের নিবার্চনেও ভোটারের মধ্যে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাথের্ই শুধু নয়, আঞ্চলিক ও আন্তজাির্তক স্বাথের্ই ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া জরুরি।” এই কংগ্রেসম্যান বলেন, “বাংলাদেশের আপামর মানুষেরই প্রত্যাশা, সুষ্ঠু পরিবেশে ভালো একটি নিবার্চন। যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাক-এটিও যুক্তরাষ্ট্রের একান্তই চাওয়া। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু চরমপন্থি বাংলাদেশের আসন্ন নিবার্চনের জন্য বড় একটি হুমকি বলে মনে হচ্ছে।” আভা শঙ্কর বলেন, “জামায়াতে ইসলামী আমেরিকাতেও তৎপরতা চালাচ্ছে ইকনা ও মূনার ব্যানারে। সেবামূলক কমর্কাÐের আড়ালে এ দুটি সংগঠনের তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক-রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি ওদের জিহাদি মতবাদের প্রচার চালানো হচ্ছে।” তিনি বলেন, ইকনার প্রধান কাযার্লয় নিউইয়কের্র জ্যামাইকায়, যেখানে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদÐ নিয়ে পলাতক আশরাফুজ্জামান বাস করছেন। আর মূনা (মুসলিম উম্মাহ ইন নথর্ আমেরিকা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিউ ইয়কর্ সিটির ব্রুকলিনে। “এটি পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে একাত্তরের ঘাতক হিসেবে ফঁাসি কাযর্কর হওয়া আল বদর নেতা মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম আলীর ওপর।” ইনস্টিটিউটের স্টানর্ কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত পৌনে দুই ঘণ্টার এ আলোচনায় স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেছে বেছে মেধাবী বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেওয়া আল বদর চৌধুরী মঈনুদ্দিন লন্ডনে বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ‘মুসলিম কাউন্সিল’। আরেক আল বদর আশরাফুজ্জামান খান নিউইয়কের্ বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ইকনা। সেবামূলক এ দুটি সংস্থার মাধ্যমে মূলত জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কমর্কাÐই চালানো হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দুটি রাষ্ট্রে।” যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদÐ কাযর্কর হওয়া জায়ামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে নথর্ ক্যারোলিনায় বসবাস করছেন জানিয়ে স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “তিনিসহ আরো অনেকেই ক্যালিফোনির্য়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জাসির্, নিউ ইয়কর্, মিশিগান, শিকাগো, ভাজিির্নয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের মতবাদ প্রচার করছেন। অথর্ ব্যয়ে তারা মাকির্ন রাজনীতিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। “মাকির্ন মিডিয়াতেও বতর্মান প্রগতিশীল সরকারের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান আইনের সুযোগ নিয়ে তারা এই ভূখÐের নীতি-আদশের্র পরিপন্থি কমর্কাÐ পরিচালনা করছেন অত্যন্ত কৌশলে।” ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কমর্কতার্ও ছিলেন এ আলোচনায়। নিউ ইয়কর্ মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি মো. আব্দুল কাদের মিয়াও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।