রাজধানীর পশুর হাট

গরু আছে ক্রেতা নাই

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

লাইজুল ইসলাম
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাটে পশু আসতে শুরু করলেও জমে ওঠেনি বিক্রি। ছবিটি সোমবার ধোলাইখাল থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
এখনো রাজধানীতে জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট। পশু আসছে ট্রাকে ট্রাক। হাটের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ভরে যাচ্ছে। নানা রং ও আকৃতির গরু, মহিষ ও ছাগলে ইতোমধ্যে কোরবানির হাটগুলো ভরে উঠেছে। কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। যারাও আসছেন শুধু ঘুরে চলে যাচ্ছেন। শুরু হয়নি বিক্রি। তাছাড়া বেশির ভাগ হাটে এখনো ঠিকমতো হাসিল ঘর বসানো হয়নি। ইজারাদাররা বলছেন, ৬ জুলাই থেকে গরু আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি শুরু হবে। তাই তারা হাসিল ঘরে কাউকে বসাতে শুরু করেনি। তাছাড়া ক্রেতা তেমন নেই বলে হাসিল ঘরের প্রয়োজনীয়তা এখনও দেখা দেয়নি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর আফতাব নগর হাটে গিয়ে দেখা যায় এক রাতের ব্যবধানে প্রচুর গরু ঢুকেছে। বেশির ভাগ বেপারী ও এগ্রোর মালিক প্রতি বছর তাদের গরু নিয়ে এখানে আসেন। তবে নতুন বেপারীরাও এসেছেন এ হাটে। আফতাব নগরে গরু বেশি বিক্রি হয় বলে অনেকের আকর্ষণ এ হাটের প্রতি। গরু দেখতে আসা ক্রেতারা বলছেন, ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট এটি। তাই এখানে গরু কেনা সহজ। এজন্য এখানে ক্রেতা সমাগম বেশি হয়। রোববার রাতে গরু নিয়ে এসেছেন এহসান রেজা ফজল। তিনি বলেন, '১৫টি গরু আমি লালনপালন করেছি। এদের মধ্যে দুটি ঝিনাইদা হতেই বিক্রি করে দিয়েছি। বাকি ১৩টি নিয়ে এসেছি। সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকার গরু আছে তার কাছে। আবার এক লাখ টাকারও গরু আছে তার কালেকশনে। এগুলোকে তিনি ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান। আশা করছেন টার্গেট মূল্যে তার গরু বিক্রি হবে। সাইজ ও লালনপালন ভালো হওয়ায় তিনি আশাবাদী।' এ সময় তিনি বলেন, 'এখানে আমি গত বছর এসেছিলাম। তখন আমরা ভালো লাভ হয়েছে। আমি সীমিত লাভে গরু বিক্রি করি। তাই দ্রম্নত বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করি এবারও বেশি দাম চাইব না। খুব দ্রম্নত বিক্রি হয়ে যাবে। আমারা ফার্মটি আরও বড় করব। তাই এবার টার্গেট প্রাইজে বিক্রি করতে পারলে ভালো হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমার গরুতে কোনো ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র অসুস্থ যাতে না হয় সেজন্য কিডনি ও ক্ষুরা রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে।' থাকা খাওয়ার কিছুটা সমস্যা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'একটা পরিবেশে আসলে কিছু কষ্ট হয়। আর হাটে এলে কষ্ট হবে এটা সবাই জানে। তাই কষ্ট করেই এখানে থাকতে হবে। তবে খাওয়ার কোনো সমস্যা আপাতত নেই। হাটের ভেতরেই হোটেলে খাওয়াদাওয়া করছেন। সামনের দিনগুলোতেও হোটেলে খাবেন।' ছোট ছোট গরু নিয়ে এসেছেন অনেক বেপারী। হাটে বড় গরুর আধিক্য থাকলেও ছোট গরুর সংখ্যাও কম না। তবে গত বছরের তুলনায় প্রতিটি ছোট গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি গনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বেপারীরা। তারা বলছেন, ছোট গরুর দাম এমনিতেই বেশি। গ্রামের হাটেই বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। শহরে এসে পাঁচ হাজার টাকা লাভ না করলে আসার কি দরকার? এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার আলফাডাঙ্গা থেকে আসা বেপারী জহরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের এলাকায় এমনিতেই এবার গরুর দাম একটু বেশি। চারটি গরু নিয়ে এসেছি। যার মধ্যে সবচেয়ে কম দামে কিনেছি ৮৫ হাজার টাকায়। বাকিগুলো ৯০ ও এক লাখ টাকা দাম। আমার কিছু লাভসহ ক্রেতা পেলে এগুলো বিক্রি করে দিব। হাটের বর্তমান অবস্থা দেখে বলা যাবে না গরুর দাম কেমন হবে। কয়েকদিন পরে বোঝা যাবে।' তিনি বলেন, 'গরুর দাম এবার একটু বেশি হবে। গতবার আড়াই মণ ওজনের গরু ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় পেলেও এবার সেটা হবে না। এবার ৭০ হাজারের ওপরে ধরে রাখতে হবে। আবার এর থেকে কমেও বিক্রি হতে পারে। যদি হাটে গরু বেশি থাকে ক্রেতা কম থাকে তাহলে গরুর দাম কমবে। তখন বেপারীদের অনেক ক্ষতি হবে। তাই আগেভাগেই গরু বিক্রির চিন্তা করছি।' এদিকে মেরাদিয়া পশুর হাটেও গরু আসছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসার পাশাপশি স্থানীয় এগ্রো প্রতিষ্ঠানের গরুও আসছে এই হাটে। আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কিছু গরু আসছে এই হাটে। তবে হাটটি আফতাবনগর হাটের চাইতে ছোট। রাস্তার ওপর বসানো হয় এই হাট। কমলাপুর হাটেও গরু আসতে শুরু করেছে। কমলাপুর সড়কের পাশের ফুটপাতেও বসানো হয় হাট। এই হাট নিয়ে বেপারীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখন পর্যন্ত তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়নি। খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি ইজারাদাররা। নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বরিশালের উজিরপুর থেকে আসা হালিম হাওলাদার বলেন, '৩০টির ওপরে গরু নিয়ে এসেছি। গরু বাঁধার জায়গা পেলেও নিজে থাকার মতো স্থান পাইনি। শৌচাগারের অবস্থা আরও খারাপ। হাটই রাস্তার ওপরে। সিকিউরিটি কীভাবে দিবে ইজারাদার তারাই জানে। আশা করছি, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই গরু বিক্রি করতে পাব। ভালো লাভও পাব। এখন পর্যন্ত বিক্রি শুরু না হলেও আশা করছি খুব শিগগিরই হাটে ক্রেতা আসা শুরু হবে।'