হেনোলাক্স গ্রম্নপের কাছে আনিসের পাওনা তিন কোটি টাকার বেশি

নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন রিমান্ডে হ টাকা নেন বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে হ গ্রামের বাড়িতে আনিসের দাফন সম্পন্ন হ বিচারের দাবি পরিবারের

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
হেনোলাক্স গ্রম্নপের মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী পরিচালক ফাতেমা আমিনের কাছে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের তিন কোটি টাকার বেশি বর্তমানে পাওনা আছে বলে জানিয়েছের্ যাব। তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ১ কোটি টাকা এবং পরে আরও ২৬ লাখ টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে কয়েক মাস নির্দিষ্ট লভ্যাংশ দিলেও এরপর আর টাকা দেননি নুরুল আমিন। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করায় তাদের টাকা পরিশোধের চাপে ছিলেন আনিস। এসব কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার দুপুরের্ যাবের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এর আগে আনিসের মৃতু্যর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়র্ যাব সদও দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ওর্ যাব-৩ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নুরুল আমিন (৫৫) এবং ফাতেমা আমিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের বড় ভাই নজরুল ইসলাম শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। পরে বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজানুর দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, গাজী আনিসের দাফন তার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা বিচারের দাবি জানিয়েছেন। হেনোলাক্স গ্রম্নপের কর্ণধার নুরুল আমিনের ব্যবসা শুরুর বিস্তারিত উলেস্নখ করে সংবাদ সম্মেলনে র?্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন আমিন। পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখেন আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্‌ যেমন- হেনোলাক্স কমপেস্নকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল এবং পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে আমিন হারবাল নামে কোম্পানি খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি। বর্তমানে লভ্যাংশসহ আমিন দম্পতির কাছে তিন কোটিরও বেশি টাকা গাজী আনিসের পাওনা বলে উলেস্নখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমিন দম্পতির কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপেস্নক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে চারতলা ভবন এবং মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। সোমবার বিকালে প্রেস ক্লাবের ফটকের ভেতরে খোলা স্থানে আনিস নিজের গায়ে আগুন দেন। শোয়া অবস্থায় তার গায়ে আগুন জ্বলছে দেখে আশপাশ থেকে সবাই ছুটে যান। তারা পানি ঢেলে আগুন নেভান। তবে ততক্ষণে তার গায়ের পোশাক সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। পরে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে তার মৃতু্য হয়। জানা গেছে, হেনোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পান গাজী আনিস। কিন্তু কোম্পানিটি পাওনা টাকা দিচ্ছিল না। এ নিয়ে আগে মানববন্ধন করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারপরই তিনি গায়ে আগুন দেন। মামলায় নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের কর্ণধার ডা. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা হয় তার ভাই 'আনিসের'। তারা একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণও করেন। তাদের মধ্যে 'খুবই সখ্য' গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে তারা (নুরুল দম্পতি) হেনোলাক্স কোম্পানিতে 'লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে' বিনিয়োগ করার জন্য আনিসুর রহমানকে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রথমে এক কোটি এবং পরে তার বন্ধুর কাছ থেকে আরও ২৬ লাখ টাকা নিয়ে আনিসুর হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করেন। এ বিনিয়োগের প্রাথমিক চুক্তি সম্পাদন করা হলেও হেনোলাক্সের পক্ষ থেকে ওই দুইজন চূড়ান্ত চুক্তি সম্পাদন করতে 'গড়িমসি করেন। এরই মধ্যে কিছুদিন আমার ভাইকে লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয় এবং চূড়ান্ত চুক্তি করতে গড়িমসি করে। পরে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন লোক দিয়ে 'নানাভাবে হেনস্তা এবং বস্ন্যাকমেইল করার চেষ্টা করা হয়। টাকা না পেয়েই নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস।' এদিকে, গাজী আনিসের দাফন তার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিনের পান্টি গ্রামে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে বড় ভাই নজরুল ইসলাম জানান। রাতে গাজী আনিসের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে এসে শোকে বিহ্বল হন এলাকাবাসী। এ সময় তার স্ত্রী জুমিনা রহমান স্বপ্না এ ঘটনার বিচার দাবি করেন এবং তিন মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানান। বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেধা রহমান আঁচল তার বাবার পাওনা টাকা উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। ৫০ বছর বয়সি আনিস ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সদস্য একসময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। পরিচিত জনরা তাকে গাজী আনিস নামেই চেনেন।