মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

'বঙ্গমাতা আমাদের ছায়াবৃক্ষ'

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন -ফোকাস বাংলা

সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সমাধিস্থলে মিলাদ ও

দোয়া মাহফিল, পদক বিতরণ ও সংবাদচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বঙ্গমাতার কবরে শ্রদ্ধা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তারা কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন এবং বঙ্গমাতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বঙ্গমাতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বঙ্গবন্ধুর সফলতার পেছনে ছিলেন

বঙ্গমাতা : পরিকল্পনামন্ত্রী

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে 'বঙ্গমাতা : ইতিহাসের সাহসী মানুষ' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার পেছনে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের হাত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করি, তিনি তার মায়ের মতো করেই কথা বলেন কেবিনেট মিটিংয়ে। তিনি তার মায়ের সঙ্গে টুঙ্গিপাড়ায় রান্না করার গল্পও করেন।'

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, 'উপমহাদেশের আগের নেতারা ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড,

আলীগড়; নিদেনপক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। এই প্রথম আমরা আকাশ থেকে নামলাম। শেখ মুজিবকে নেতৃত্ব দিতে দেখলাম। যিনি বাংলার মাটি থেকে উঠে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু সফল হয়েছিলেন। কারণ, তিনি গ্রামের মানুষ, কৃষক, শ্রমিক এদের নিয়ে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও তার পিতার মতো গ্রামগঞ্জ নিয়ে ভাবেন।'

শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু আমাদের বটবৃক্ষ, বঙ্গমাতা আমাদের ছায়াবৃক্ষ। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের ডাক্তার ছিলেন বঙ্গমাতা।'

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সহধর্মিণীর মতো বঙ্গমাতা সহমরণ বেছে নিয়েছিলেন মন্তব্য করে শিক্ষাবিদ ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম বলেন, 'এ দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গমাতার ভূমিকা অনন্য। ৬ দফার আন্দোলনকে সফল করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি, যার সাক্ষী আমি নিজেই।'

সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'গাফফার চৌধুরী একবার পত্রিকা বের করতে পারছিলেন না। বঙ্গবন্ধুকে বললে তিনি টাকা নেওয়ার জন্য পরদিন দেখা করতে বলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাতেই গ্রেপ্তার হয়ে জেলে চলে যান। গাফফার চৌধুরী যখন ঘোর দুশ্চিন্তায় তখন বঙ্গমাতা তাকে ডাকলেন পরের দিন। টাকা দিয়ে বঙ্গমাতা বলেন, বঙ্গবন্ধু আপনাকে এই টাকা দিতে বলেছেন। এ রকমই দায়িত্বশীল ছিলেন বঙ্গমাতা।'

'কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন জরুরি'

বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব' শীর্ষক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে কিন্তু তাদের কুশীলবদের মুখোশ এখনো উন্মোচন হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জাতিকে বিভক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন খুনিদের চিনতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে তদন্ত কমিশন গঠন করে কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।

সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়।

হানিফ বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশের জনগণের জন্য এবং বেগম মুজিবের কর্মকান্ডও ছিল এ দেশের মানুষের জন্য। তিনি ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য না করতেন, অনুপ্রেরণা না দিতেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এত ত্যাগ স্বীকার করা সম্ভব ছিল না।

তিনি বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন সহজ-সরল মেয়ে। বেগম মুজিবের উলেস্নখ করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তার অসামান্য বিচক্ষণতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না; কিন্তু নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেছেন। যেকোনো বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে তার পরামর্শগুলো ছিল অবিস্মরণীয় এবং বাস্তবসম্মত।

বেগম মুজিব দলের নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উলেস্নখ করে হানিফ বলেন, বেগম মুজিব এক হাতে সব সামলেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার চালিয়েছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। শুধু ঘরের কাজ করেই ক্ষান্ত হননি বরং রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায় ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর খন্দকার বজলুল হক। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

মেয়র আতিকের শ্রদ্ধা : সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বনানী কবরস্থানে ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের নিয়ে বঙ্গমাতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমানসহ ডিএনসিসির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র তাপসের শ্রদ্ধা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বঙ্গমাতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, দক্ষিণ সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আনোয়ার ইকবাল সান্টু, প্রটোকল কর্মকর্তা মো. দাউদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে