মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

হ সৌদি আরব ও সার্বিয়ার সঙ্গে দু'টি চুক্তি অনুসমর্থন হ জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ এর খসড়ার অনুমোদন হ ওষুধ আইন-২০২২ এর খসড়ার অনুমোদন হ সরকারি ওষুধ চুরিতে জেল-জরিমানার বিধান

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন -ফোকাস বাংলা
জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতার বিষয়ে জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এছাড়া সৌদি আরব ও সার্বিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুসমর্থন, জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ এর খসড়া এবং সরকারি ওষুধ চুরির জন্য জেল-জরিমানার বিধান রেখে ওষধ আইন ২০২২-এর সংশোধিত খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে সৌদি আরব ও সার্বিয়ার সঙ্গে দু'টি চুক্তির অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর একটি হলো, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে 'এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন অ্যান্ড মিচু্যয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস মেটার্স' শীর্ষক চুক্তি। অপরটি সার্বিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত যাওয়া-আসা নিশ্চিতে দেশটির সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি। সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির ফলে পাঁচটি সুবিধা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে, দুই দেশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ সুসংহত হবে, পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে, গোয়েন্দা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা দেওয়া যাবে এবং শুল্ক বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সৌদি আরবের কাছ থেকে আমরা কো-অপারেশন নিতে পারব। সার্বিয়ার সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তির বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা অনেক দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি করছি। সার্বিয়ার সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হলো- কূটনৈতিক বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট যাদের থাকবে, তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসা নিতে হবে না। এ চুক্তি সই হলে সার্বিয়া যেতে বাংলাদেশি কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা লাগবে না। একই নিয়ম সার্বিয়ার কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। ওষুধ আইন-২০২২ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা অনেক বড় আইন। মোট ১০৩টি ধারা এ আইনে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, ওষুধ প্রশাসন কীভাবে চলবে, ওষুধের মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেসব ঠিক করার জন্য একটি নির্বাহী পর্ষদ থাকবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, মজুত, বিতরণ ইত্যাদির জন্য কীভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হবে, ফি কী হবে, লাইসেন্সপ্রাপ্তির যোগ্যতা কী থাকবে- এগুলো তারা ঠিক করবে। তিনি জানান, লাইসেন্স নেওয়ার পর কেউ ?যদি আইন লঙ্ঘন করে, সে ক্ষেত্রে লাইসেন্স স্থগিতের সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়াই কোনো ধরনের ওষুধ উৎপাদন করলে কী শাস্তি হবে, ওষুধ মজুতের ক্ষেত্রে নিয়ম কী হবে- সেসব বিষয়ও খসড়ায় বলা হয়েছে। সচিব আরও বলেন, সরকারি ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধগুলো কোনোভাবেই যেন ট্রানজেকশনের মধ্যে না আসে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ওষুধ আমদানি করা যাবে না। এ আইন ভাঙলে 'ব্যাপক' শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কেউ ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। এ আইনে এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি। ভেজাল ওষুধ তৈরি, বিক্রি, মজুত করলেও একই মাত্রায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। এসব অপরাধের বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে আদালত থাকবে। ড্রাগ অথরিটিই তদন্ত করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের 'ড্রাগ অর্ডিন্যান্স' এবং ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যাক্ট দিয়ে এতদিন চলছিল। পাশাপাশি ১৯৮৪ সালের ওষুধ নীতিমালাও অনুসরণ করা হচ্ছিল। পুরনো আইনগুলোকে সমন্বিত ও হালনাগাদ করে এখন নতুন আইন হচ্ছে। বৈঠকে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সচিব বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতার বিষয়ে জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে কি না- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এগুলো এরই মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসির চেয়ারম্যান প্রেসে বিস্তারিত বলেছেন। ওটাই জাস্ট মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে তো ওনারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেনই। এর মধ্যে আবার ব্যাখ্যা দেবেন। আজ (বৃহস্পতিবার) বলে দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়।