মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপির সমাবেশ

রাজপথ দখলে প্রস্তুতির ডাক

দেশকে রক্ষা করার লড়াই শুরু হয়েছে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সরকারকে সরিয়ে সত্যিকারের জনগণের সরকার ও রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। এই লড়াইয়ে রাজপথ নিজেদের দখলে নিতে হবে।
ম যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদু্যতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। ইনসেটে বক্তব্য রাখছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা

দীর্ঘ ৮ মাস পর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বড় পরিসরে সমাবেশ করেছে বিএনপি। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর থেকেই দলের নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ফকিরাপুলের মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুটপাতের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ব্যানার হাতে নানা সেস্নাগানে মিছিলে নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসেন। এ সময় নয়া পল্টনে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মিছিলে নেতা-কর্মীদের হাতে ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি স্থান পায়। পাশাপাশি ব্যানারে লেখা ছিল জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, বিদু্যতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত নুরে আলম ও আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে রাজপথ দখলে নিতে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে রক্ষা করার লড়াই শুরু হয়েছে। রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সরকারকে সরিয়ে সত্যিকারের জনগণের সরকার, রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। এই লড়াইয়ে রাজপথ নিজেদের দখলে নিতে হবে। সরকার হটাতে নেতা-কর্মীদের 'রাজপথ দখলে'র প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করার লড়াই। এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। এই লড়াইয়ে অবশ্যই সবাইকে শরিক হতে হবে, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ দখল করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে দানবীয় সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার তৈরি করা হবে।

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে, সরকার গঠন করতে হবে।

আগামী ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে বলে ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, রোববার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। এরপর আগামী ২২ আগস্ট থেকে সব উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, চাল, ডাল, তেল সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেক দিকে বিদু্যতের সমস্যা সেটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য আমার দেশে যে গ্যাস আছে সেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাদের নিজস্ব লোকদের দিয়ে গ্যাস আমদানির ফলে আজকে বিদু্যতের দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে। বিদু্যতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার পস্ন্যান্টে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার

হয়ে গেছে। গত ৭ বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলারের। বাকি ৩০ বিলয়ন ডলার কোথা গেল? কারা নিয়ে গেল? তা জনগণ জানতে চায়।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রদল-যুবদলসহ সরকার বিরোধী আন্দোলনে 'জেগে' ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের তরুণ সমাজ, যুব সমাজ তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। তাদেরকে আজকে নতুন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।

সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাধা প্রদানের অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির বিদায়ের সময় হয়েছে- ক্ষমতাসীন এক মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি বিদায় হবে না। বিদায় হবে এই অবৈধ সরকার। দেশ দেউলিয়ার দিকে যাচ্ছে। শ্রীলংকার চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ। তাই আজকে রাস্তায় নামতে হবে। এর দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশকে আওয়ামী লীগ দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে। গত ৫ বছরে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যেকোনো মূল্যে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। কারণ সব গুম, খুন ও হত্যার বিচার করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দাবি একটাই- শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির অনেক নেতা জীবন দিয়েছেন, গুম ও খুন হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। সরকার দেশ চালাতে পারছে না। কিন্তু মিথ্যা কথা বলছেন। এই অবস্থা থেকে বের হতে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং লড়াই করতে হবে। আর সাহস করে রাজপথে নামতে হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বাংলাদেশ আজ লুণ্ঠিত। এই দুর্নীতিবাজ সরকারের লুণ্ঠন থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা এখন সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ওপর একটা ঈমানি দায়িত্ব। সবাই মিলে এই লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাই।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়াম্যান আব্দুলস্নাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উলস্নাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। দলের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আতাউর রহমার ঢালী, আবদুল কুদ্দুস, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, রকিবুল ইসলাম বকুল, কামরুজ্জামান রতনসহ অঙ্গসংগঠন ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে