সাগরের রুদ্রমূর্তি, সৈকতে তীব্র ভাঙন

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার প্রতিনিধি
জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভাঙন -যাযাদি
সাগরের লঘুচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে দু-থেকে চার ফুট বেড়ে জোয়ারের বাড়ন্ত পানির ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমে ভাঙছে নান্দনিক কক্সবাজার সৈকতের পাড়। সেইসঙ্গে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় ঢেউয়ের তোড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঝাউগাছের সারি। ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সৈকতের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেট। টুরিস্ট পুলিশ বক্সের মতো করে লাবণী পয়েন্ট থেকে উত্তরে সমিতিপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সৈকতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ভাঙন। পূর্ণিমার জোয়ারের পানির উচ্চতা আরও বাড়লে ভাঙনও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট আকারে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এতে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে পস্নাবিত হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকালে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত বড় বড় ঢেউয়ের তোড়ে বিভিন্ন এলাকার বালু সরে গেছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। এতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ভাঙনের কবলে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি, ঝাউগাছ। ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙন সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসন নির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ পর্যন্ত চলে এসেছে। লাবণী পয়েন্টের বিচ মার্কেটের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন, সৈকতের বিচ মার্কেটের ২ শতাধিকের বেশি আচার, শুঁটকি ও বার্মিজ পণ্যের দোকান রয়েছে। এখন সবগুলো দোকান ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ঢেউয়ের আঘাত আসবে এই ভয়ে রয়েছি। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে সাগরের আগ্রাসন বাড়ছে। তবে এ বছর এর মাত্রা আরও বেড়েছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হান্নান জানান, গত ৪ বছর ধরে লাবণী পয়েন্টের উত্তরে সাগরের ভাঙনে ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যায়। লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশও ভাঙনের কবলে পড়ে। এটা রক্ষার জন্য জিউ ব্যাগ দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকদিন জোয়ারে লাবণী পয়েন্টে ভাঙন তীব্র হয়ে ওঠে। যার কারণে সৈকতের বালিয়াড়ির বিশাল অংশ বিলীন হয়ে ভাঙন কাছাকাছি চলে আসায় ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সও প্রায় বিলীনের পথে। একইসঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে সৈকতপাড়ের ৫ শতাধিক দোকান। কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি ওয়াহিদুর রহমান ও নাহিদ আকতার জানান, কক্সবাজার সৈকতে নামার প্রধান পথ হচ্ছে লাবণী পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন হওয়ায় চরম ঝুঁকিতে। যা পর্যটকের জন্য আতঙ্কেরও বটে। সি সেইফ সংস্কার লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ জহির বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতের একমাত্র নিরাপদ গোসলের জায়গা হচ্ছে লাবণী পয়েন্ট। কিন্তু ভাঙনের কারণে পর্যটকরা আসবে কি না সংশয় রয়েছে। বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, ভাঙনে তীব্রতা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে সৈকতের পাড় বা ঝাউবিথী রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই দ্রম্নত সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে টেকসই বাঁধ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সৈকতের তীব্র ভাঙনের পুলিশের কয়েকটি স্থাপনা ঝুঁকিতে থাকায় তা রোধে পরিবেশবান্ধব কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ডক্টর তানজির সাইফ আহমেদ জানান, ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে একাজ করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।