১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড কারবালার চেয়েও ভয়ংকর :তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম যাযাদি ডেস্ক
১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড কারবালার হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়ংকর বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, সেই হত্যাকান্ডে নারী-শিশু কেউই রক্ষা পায়নি। যারা হত্যা করেছেন শুধু তারা নয়, যারা সেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন এবং বদনাম করেছিলেন তাদের সবার মুখোশ উন্মোচন করা সময়ের দাবি। তদন্ত কমিশন গঠন করে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এ সভার আয়োজন করে। সভার শুরুতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় শেকৃবির সাবেক উপাচার্য ও শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন আহাম্মদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কৃষিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, শেকৃবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ডক্টর মো. সাঈদুর রহমান সেলিম প্রমুখ। হাছান মাহমুদ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উচিত ফিলিস্তিন, মিয়ানমারের দিকে নজর দেওয়া এবং ভালো হতো যদি তাদের হাইকমিশনার এ দেশে ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসে হতাহতদের পরিবারের কথা শুনতেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে শিশুরা ইসরাইলি সৈন্যের দিকে ঢিল ছুড়লে প্রতু্যত্তরে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ে তাদের হত্যা করা হয়। আর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশকে বাহবা দিলেই হবে না, মিয়ানমারে গিয়ে সেখানে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটা এসব দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নজর দেওয়া উচিত। ডক্টর হাছান বলেন, 'বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী জিয়া ও তার দল। জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল, খুনিদের পুনর্বাসিত করেছিল। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে হাজার হাজার সেনাসদস্যকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল। আর ২০১৩-১৪-১৫ সালে তার তৈরি করে রেখে যাওয়া দল বিএনপি ও তাদের দোসর জামায়াতের হরতাল-অবরোধের নামে শত শত নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে।' জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট তার সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ সফরকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে কথা বলেছেন, সে প্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই আইন। আমাদের এ আইন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের বলব অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে এ আইনের দিকে তাকাতে। সেখানকার আইনে আমাদের চেয়েও কঠিন ধারা আছে। আমাদের যে ধারাগুলো নিয়ে কথা হয়, ভারত ও পাকিস্তানেও একইরকম ধারা আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রেমওয়ার্ক ল' করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। সেটির আলোকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের আইন করেছে। কই, সেগুলো নিয়ে তো কোনো কথা বলেন না। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষা করেছিল ও সরকারি চাকরি দিয়েছিল তারা এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে। এখনও তারা ধ্বংস হয়নি। এখন তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোহে রয়েছে। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান চায়। এখন শুধু তারা বঙ্গবন্ধুকন্যার বিরোধিতা করে না তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তারা যেকোনো উপায়ে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসতে চায়। এর জন্য তারা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তারা মিথ্যাচার ও গুজব রটিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করতে চায়। এরাই দেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, শুধু গণতন্ত্রের লেবাস ধরে থাকে। তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ মর্যাদার আসন রয়েছে। এই বিএনপি-জামায়াত আমাদের এই মর্যাদার আসন থেকে ছিটকে ফেলে দিতে চায়। তারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কোনো কর্মসূচি দিতে পারে না। তারা উন্নয়ন ও গঠনমূলক সৃজনশীল কোনো কর্মকান্ড করতে পারে না। তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটাতে চায়। তারা জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এই বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার গণতান্ত্রিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের হত্যা করেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত এনেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন চাই উন্নয়নের পথে হাঁটতে, এগিয়ে যেতে। এই পথযাত্রায় যেখানেই বাধা আসবে আমরা সেখানেই প্রতিবাদ করব। বিএনপি-জামায়াত যখনই সুযোগ পাবে এই বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো বানাবে অথবা পাকিস্তান শাসনের মতো দুঃশাসনে পরিণত করবে। এরা সুযোগ পেলেই দেশকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করবে। আমরা জাতির পিতার সৃষ্ট বাংলাদেশে এমন কোনো কিছু হতে দিতে পারি না। তাই এদের এমন কোনো কর্মকান্ড দেখলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করব।