চাঁদপুরে লন কার্পেট ঘাস চাষ

প্রতি বর্গফুট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম চাঁদপুর প্রতিনিধি
সবুজ মোলায়েম লন কার্পেট ঘাস হাতে গোলাম রাব্বি -যাযাদি
চাঁদপুরে পতিত জমিতে চাষ হচ্ছে সবুজ মোলায়েম লন কার্পেট ঘাস। দেখলে মনে হবে, যেন সত্যিকারের কোনো ঘাস কার্পেট। আর এই ঘাস বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন প্রবাসফেরত যুবক গোলাম রাব্বি। বাড়ি বা অফিসের আঙ্গিনায়, বাগানে, কবরস্থানে, পাহাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনে ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে এই কার্পেট ঘাস। বর্তমানে চাঁদপুর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। জান যায়, চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার লোহারপুল এলাকার গোলাম রাব্বি নামের এক যুবক দুই বছর আগে সদর উপজেলার বহরিয়া দোকানঘর এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ পরিত্যক্ত জমি ভাড়া নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব এই ঘাসের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ওই এলাকায় পৃথক চারটি স্থানে প্রায় পাঁচ একর জমিতে এই ঘাস চাষ করা হচ্ছে। গোলাম রাব্বি বলেন, 'আমি দীর্ঘ প্রায় সাত বছর বাহরাইন ছিলাম। সেখানেই এই লন কার্পেট ঘাসের কাজ চাষ শিখি।' রাব্বি বলেন, বাহরাইন থেকে দেশে ফিরে আসার পর বিদেশে যেতে আর ভালো লাগছিল না। পরে বাড়ির কাছেই দোকানঘর জাফরাবাদ এলাকায় ফসলহীন একটি উঁচু জমি খুঁজে বের করি। ঢাকা থেকে এই ঘাসের বীজ সংগ্রহ করে প্রথমে সেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই ঘাসের চাষ শুরু করি। যখন দেখলাম, এখানেও এটি করা যাবে। তখন আস্তে আস্তে জমিও বাড়াতে থাকি। পরে এটি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেই। বিষয়টি সারাদেশের মানুষের নজরে আসায় আমার এই প্রকল্পটিও বাড়তে থাকে। এভাবে বর্তমানে ওই এলাকায় আমার চারটি স্থানে এই ঘাস চাষ চলছে।' গোলাম বাব্বি বলেন, 'লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এই ঘাস এখন অনলাইনে বসেই সারাদেশে বিক্রি করছি। প্রয়োজনে নিজ লোক দিয়েও পৌঁছে দিচ্ছি।' বর্তমানে তার এই ঘাস চাষ প্রকল্পে ৩০-৪০ জন লোক কাজ করছেন। তিনি নিজেও স্বাবলম্বী এখন। তার এই ঘাস চাষ দেখে অনেকেই তা চাষে আগ্রহী হয়ে সরাসরি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাব্বির এই ঘাস চাষ দেখে পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক বাংলো ও মুন্সীগঞ্জ ভূমি অফিসের জন্য চার হাজার স্কয়ার ফিট এই কার্পেট ঘাস কিনে নিয়ে যায়। গোলাম রাব্বি বলেন, এর মূল নাম মেক্সিকান-বারমুডা গ্রাস। লন কার্পেট ঘাস হিসেবে বেশি পরিচিত। আমাদের দেশে অনেকে কার্পেট ঘাস নামে ডাকেন। তিনি ভারত থেকে চারা আনার পর সেটা ছোট ছোট টুকরো করে 'মুড়া' বানিয়ে পতিত জমিতে পলিথিন বিছিয়ে এর ওপর হালকা মাটি দিয়ে রোদে দেন। কয়েকদিন অল্প করে পানি দেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন। কার্পেটের মতো রাখতে ১৫ দিন পরপর কাঁচি দিয়ে আগা ছাঁটা হয়। রাব্বি জানান, তিনি ৯০ হাজার বর্গফুট জমিতে এটি চাষ করছেন। তার চার প্রকল্পের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। জমি বাবদ ভাড়া দিতে হয় বছরে পাঁচ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনপ্রতি দৈনিক হাজিরা ৬০০ টাকা। বর্তমানে তিনি এই ঘাস প্রতি বর্গফুট বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়। ইতোমধ্যে এই ঘাস চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, নরসিংদী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জসহ অনেক জেলায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলা থেকে আগ্রহীরা যোগাযোগ করছেন।