উন্নয়নের স্বপ্ন লিটনের: খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছেন বুলবুল

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
খায়রুজ্জামান লিটন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল
সিটি করপোরেশন (রাসিক) নিবার্চনের প্রচার-প্রচারণার শুরুতেই আন্দোলিত হয়ে উঠেছে ‘রাজশাহী’। দুই দলের হেভিওয়েট প্রাথীর্ লিটন-বুলবুল মহারণ দেখতে যেন মুখিয়ে রয়েছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। কী করেছেন, আর নিবাির্চত হলে কী করতে চান; নিজেকে স্বপ্নশ্রমিক দাবি করে প্রচারণায় নেমে সেসব কথারই ফিরিস্তি তুলে ধরছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব, বিদ্বেষ আর শরিক দল জামায়াতের অসযোগিতা নিয়ে তালগোলে থাকা মোসাদ্দেক বুলবুল বলছেন কারান্তরীণ খালেদার মুক্তির কথা। অনুষ্ঠেয় রাসিক নিবার্চনকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই দেখছেন বুলবুল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীর্রা। ফলে উন্নয়নের পথে থাকবেন, না খালেদার মুক্তির আন্দোলনে শরিক হবেন তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন সাধারণ ভোটাররা। অন্যদিকে প্রতীক পাওয়ার পরপর গত মঙ্গলবার ১৫ দফা নিবার্চনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন নৌকার মেয়রপ্রাথীর্ এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১১ পাতার নিবার্চনী ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কমর্সংস্থানের। এছাড়া মোট ৮১টি পয়েন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, তরুণদের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয়া, সড়ক, অবকাঠামো উন্নয়ন, তার সময়ে নেয়া বড় প্রকল্পগুলো শেষ করা, আয় বাড়াতে নতুন প্রকল্পসহ ১৫ দফা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন লিটন। এরই মধ্যে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ ১৪ দলের শরিক দলগুলো সভা করেছে। ওই সভায় নৌকার প্রাথীর্ খায়রুজ্জামান লিটনের জয় সুনিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য জোটের সমন্বয়ক হিসেবে ওয়াকার্সর্ পাটির্সহ অন্য সবাইকে নিদের্শ দিয়েছেন বাদশা। তবে লিটন ইস্যুতে রাজশাহীতে ১৪ দলীয় নেতারা একাট্টা হলেও প্রতিপক্ষ শিবিরে তা এখনও অদৃশ্য। বুলবুলের পক্ষে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল জামায়াতে ইসলামী শেষ পযর্ন্ত তাদের প্রাথীর্ দেয়নি ঠিকই। কিন্তু সমথর্নও জানায়নি। প্রাথীর্ দেয়া নিয়ে জোর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পযর্ন্ত হাইকমান্ডের নিদেের্শ সেখান থেকে সরে আসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও নিবার্চনী প্রচারণায় এখন পযর্ন্ত বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামেনি। সিটি নিবার্চন ঘিরে কয়েক মাস আগেই মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ছিদ্দিক হোসেনকে মেয়রপ্রাথীর্ ঘোষণা করেছিল জামায়াতে ইসলামী। মহানগরের প্রতিটি এলাকায় রঙিন পোস্টার, লিফলেটও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত তিনি মনোনয়নপত্র তোলেননি। তবে জোটের শরিক দল বিএনপির মেয়রপ্রাথীর্ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেও আনুষ্ঠানিক সমথর্ন দেয়নি দলটি। কেন্দ্র থেকে নিদের্শ দিলেই শুধু বিএনপির প্রাথীের্ক সমথর্ন জানাবে স্থানীয় জামায়াত। তবে এক সময়ের সুসংগঠিত জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভঙ্গুর। মহানগর সেক্রেটারিসহ নেতাকমীের্দর বেশির ভাগ সদস্যই নাশকতার মামলায় এখন কারাবন্দি। যারা বাইরে আছেন, তারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কাজেই দলটির সমথর্ন নিয়ে বিএনপির কতটা লাভ হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। তবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগ থেকেই নানা প্রতিশ্রæতি দিয়ে ভোটারদের সমথর্ন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। ফলে সবদিকের আশ্বাসে এখন যেন হাতে আকাশ পেয়েছেন লিটন। জানতে চাইলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার সময় ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বণর্যুগ। ওই সময় রাজশাহীর যা উন্নয়ন হয়েছে তা আর কারও আমলে হয়নি। ২০১৩ সালের নিবার্চনে তিনি জয়ী হলে এতদিনে রাজশাহী আধুনিক নগরী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেত। কিন্তু গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই মানুষ আর ভুল করবে না। উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনতে এবার নৌকায় ভোট দেবেন। নিবাির্চত হলে রাজশাহী হবে ‘মেগা সিটি’ বলেন লিটন। অপরদিকে সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, মামলা দিয়ে তাকে গত মেয়াদের অধেের্কর বেশি সময়ই নগর ভবনের বাইরে রেখে কাজ করতে দেয়া হয়নি। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী সিটির মেয়র থাকার সময়ে তিনি মাত্র ২৬ মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে ১২টি মামলা দেয়া হয়েছে। যেগুলোর ৮টি চলমান, চারটি স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। হাজতেও থাকতে হয়েছে প্রায় সাত মাস। দুবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। রাজশাহীর মানুষ এসবের সাক্ষী। ভোটারদের কাছে এটা পরিষ্কার, সুযোগ পেলে তিনি রাজশাহীর উন্নয়ন করবেন। বুলবুল বলেন, বতর্মানে নিবার্চনের কোনো পরিবেশ নেই। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা না গেলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। এরপরও তারা নিবার্চনে অংশ নিচ্ছেন। কারণ দলীয়ভাবে এ নিবার্চনকে তারা কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিয়েছেন। জামায়াতের সমথর্ন বিষয়ে জানতে চাইলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি বলে শুনেছি। সিদ্ধান্ত পেলে শরিক দল জামায়াতও মাঠে নামবে’।