নওগঁায় ডাকাত-পুলিশ প্রেমের খেলা

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

নওগঁা প্রতিনিধি
মেহেদী হাসান
চোর-পুলিশ খেলার কথা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু ‘চোর-পুলিশের প্রেম’ কথাটির সাথে সবাই ততটা পরিচিত নন। তবে কাল্পনিক বিষয় কখনো সত্য হয়ে ওঠে। তবে চোরের পরিবতের্ ডাকাত হলে তো কথাই নেই, সেটি আরও জটিল। এক ডাকাতের সাথে নারী পুলিশের কথিত প্রেম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ডাকাতকে প্রেমের ফঁাদে ফেলে আটক করতে সক্ষম হন ওই নারী পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে নওগঁা সদর থানায়। ট্রাক চালক লিটন আলী (২৩), যার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার নুরনগর গ্রামে। গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রাকে করে ৫০০ বস্তা মুরগির ফিড নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। নাটোর-বগুড়া সড়কের সিংড়া বাজার থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১০-১২ জনের অজ্ঞাত ডাকাত দল একটি মিনি ট্রাক দিয়ে তার ট্রাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার ডাকাত ট্রাকের কেবিনে উঠে চালক ও চালকের সহযোগীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ ও রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। সাথে থাকা ১৩ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়। এরপর ডাকাতদের মিনি ট্রাকে তাদের উঠিয়ে নেয়া হয় এবং অন্য ডাকাত সদস্যরা মালবাহী ট্রাক নিয়ে একই দিকে চলে যায়। পরের দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে নওগঁা শহরের বাইপাস বরুনকান্দি মোড়ে তাদের ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে নাইট গাডর্ শমসের আলী তাদের উদ্ধার করেন এবং টহল পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। ট্রাকচালক লিটন আলী বাদী হয়ে ওই দিন অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পড়ে থানার পুলিশ পরিদশর্ক (অপারেশন) এমএম ফয়সাল আহম্মেদের ওপর। তিনি বলেন, ডাকাত মেহেদী হাসানকে প্রেমের ফঁাদে ফেলে আটক করা হয়। তার বাড়ি বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার ইসলামপুরে। স্ত্রী ও সংসার আছে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগীদের আটক করা হয়। ফয়সাল আহম্মেদ আরও বলেন, সোসের্র মাধ্যমে মেহেদীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। এরপর তার নম্বরে একটা কল করা হয়। তারপর বেশ কয়েক দিন নম্বরটি বন্ধ থাকে। এরপর মেহেদীর নম্বরটি থানার এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে দেয়া হয় তাকে কল করার জন্য। ডাকাত মেহেদীর ফোন নম্বরে রিং হতে থাকে। অবশ্য তিনি একটা আলাদা সিমও ওই নারী পুলিশকে দিয়েছিলেন। ওই নারী পুলিশ ডাকাতের সাথে কলেজছাত্রীর পরিচয় দিয়ে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। এতে টোপ গিলে মেহেদী। নারী পুলিশ পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচেই চালান। টিউশনি করে ১২ হাজার টাকাও জমিয়েছেন। কয়েক দিনের এসব মিষ্টি কথায় নারী পুলিশের প্রেমে পড়ে ডাকাত মেহেদী। এরপর প্রেমিকার সাথে দেখা করতে চায় মেহেদী। ওই নারী পুলিশও তার সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে। অবশেষে ২২ অক্টোবর-১৮ তারিখে নারী পুলিশ বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলা সদরে সিএনজি স্ট্যান্ডে প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যান। বেচারা মেহেদী আগে থেকে সিএনজি ভাড়া করে বসে থাকে প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে বলে। স্ট্যান্ডে দুজনের দেখা হয়। এরপর পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। অবশেষে প্রেমিকার স্থান হয় শ্রীঘরে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ১২ জন ডাকাত সদস্যকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও আছে। ইতোপূবের্ একই কায়দায় এক আসামিকে আটক করা হয়েছিল। তখন দীঘর্ সময় লেগেছিল। তবে এ ডাকাত মামলায় এত দ্রæত আসামিদের আটক করা সম্ভব হবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি বলে জানান।